কলকাতা: বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফের 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্পে টাকা বাড়ানো হতে পারে বলে জল্পনা ছিল। কিন্তু সেই পথে হাঁটলেন না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে যে 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্প তাঁকে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসতে সাহায্য় করেছিল, নির্বাচনের আগে সেই প্রকল্পে কেন টাকা বাড়ানো হল না, প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারি পর্যন্ত জানিয়েছেন, অন্য রাজ্যে বিজেপি অনেক বেশি টাকা দেয় মহিলাদের। কিন্তু কেন টাকা বাড়ালেন না তিনি, তার কারণ খোলসা করলেন মমতা। (Mamata Banerjee)
বুধবার রাজ্য বিধানসভায় বাজেট পেশ হওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মমতা। সেখানে তাঁর পাশে ছিলেন অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্রও। 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্পে কেন টাকা বাড়ানো হল না, তার কারণ জানাতে গিয়ে মমতা বলেন, "আমাদের দেখে টুকলি করেছে কিছু রাজ্য। নির্বাচনে জেতার জন্য বিজেপি করেছে। আবার বন্ধও হয়ে গিয়েছে অনেক রাজ্যে। সেখানে অনেক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মোটর সাইকেল, ফোন থাকলে হবে না, ২.৫ লক্ষ টাকা আয়ের শর্ত। কিন্তু আমাদের প্রকল্পটা সার্বিক।" (Lakshmir Bhandar)
মমতা জানিয়েছেন, নবম 'দুয়ারে সরকার' প্রকল্পে ১২ কোটি আবেদন এসেছে। বাম আমলে শেষ যখন জনগণনা হয়, তার নিরিখে প্রশ্ন উঠতে পারে। এখন ১২ কোটি হল কী করে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কিন্তু মমতা জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে এক পরিবারের তিন মহিলাও 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' পান। আমাদের প্রকল্প সার্বিক। এখানে কন্য়াশ্রী, রূপশ্রী, কৃষভাতাও রয়েছে। মোট ৯৮টি প্রকল্প, জন্ম থেকে মৃত্যু কিছু বাদ নেই।
'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্পের আওতায় মমতাই প্রথম বাড়ির মহিলাদের হাতে টাকা তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। বর্তমানে সব রাজ্যেই প্রায় এই প্রকল্প গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। এমনকি রাজনীতিতে ক্ষমতাদখলের হাতিয়ারও হয়ে উঠেছে। হালফিলে দিল্লিতেই নগদ সাহায্য নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়। আম আদমি পার্টি ২১০০ ঘোষণা করলে, বিজেপি ২৫০০ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা করে। এমনকি বাংলাতেও ক্ষমতায় এলে ৩০০০ টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিজেপি। কিন্তু মমতা সাফ জানিয়েছেন, ওই প্রকল্প তাঁর প্রকল্প। আজীবন মহিলারা টাকা পাবেন এই প্রকল্পের আওতায়। অন্য রাজ্যের মতো তিনি কোনও শর্ত রাখার পক্ষপাতী নন।
মমতা জানিয়েছেন, রাজ্যে তিনটি ধাপে পড়ুয়াদের স্কলারশিপ দেন তিনি, স্কুলে স্কলারশিপ দেওয়া হয়। ১৮ বছরের আগে বিয়ে না করলে আরও ২৫০০০ টাকা মেলে। কলেজে স্কলারশিপ পাওয়া যায়, আবার উচ্চশিক্ষাতেও স্কলারশিপ মেলে। মমতা জানিয়েছেন, রাজ্যের ১ কোটি মেয়ে কন্যাশ্রীর টাকা পায়। তফসিলি জাতি ও উপজাতিরা শিক্ষাশ্রী এবং সংখ্যালঘুরা ঐক্যশ্রী পান। ঐক্যশ্রী প্রকল্পে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৪ লক্ষ আবেদনের ভিত্তিতে ১৬ লক্ষকে ভাতা দেওয়া হয়। ফেব্রুয়ারিতে তা ৩৩ লক্ষ হয়ে গিয়েছে। সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৪৫ লক্ষ আবেদন এসেছে, যা মার্চের মধ্যে মিটে যাবে।
মমতা জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের ২ কোটি ২১ লক্ষ মহিলা 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্পে টাকা পান। এবারে দুয়ারে সরকার শিবিরে আরও কয়েক লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে। আবেদন যাচাই করে, সমীক্ষা চালিয়ে সেগুলি দেখা হবে। রাজ্যে কন্যাশ্রী পায় ১ কোটি মেয়ে। রূপশ্রী পান ১৮ লক্ষ ৬৪ হাজার। 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্পে ৫০ হাজার কোটি খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছেন মমতা। পাশাপাশি, কন্যাশ্রীতে ১৫০০০ কোটি, রূপশ্রীতে ৪ লক্ষ হাজার ৬৬০ কোটি, স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ঋণ দেওয়া হয়েছে ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকার। স্বাস্থ্যসাথীতে প্রায় ৯ কোটি পরিবারের নাম নথিভুক্ত হয়েছে। ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ তাতে। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে বছরে ২০০০ কোটি টাকা করে খরচ হয়।
যে হিসেব দিয়েছেন মমতা, সেই অনুযায়ী, শিশুসাথী প্রকল্পের আওতায় ৩১ হাজার ৬০৮টি হার্ট সার্জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মমতা। টেলি মেডিসিনে ফোনে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে উপকৃত হয়েছেন ৪ কোটি ৮২ লক্ষ মানুষ। বার্ধক্য ভাতা বাবদ ৩০ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ উপকৃত। জয় জোহারে ২ লক্ষ ৯২ হাজার জনজাতি, পেনশন বাবদ আরও লক্ষ লক্ষ মানুষ উপকৃত হয়েছেন। মমতা জানিয়েছেন, ১ কোটি ২৬ লক্ষ সবুজ সাথী পেয়েছে। ঐক্যশ্রী পান ৪ কোটি ২৭ লক্ষ, শিক্ষাশ্রী পান ১ কোটি ৪ লক্ষ, মেধাশ্রী পান ৪ লক্ষ ৬৫ হাজার। স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপে ৩২ লক্ষ ৬০ হাজার, স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ডে ৮০ হাজার উপকৃত হয়েছেন। তরুণের স্বপ্নের পাশাপাশি এখন থেকে আশাকর্মী এবং আইসিডিএস কর্মীদের স্মার্টফোন দিতেও ২০০ কোটি বরাদ্দ করেছে রাজ্য।