কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ভূরি ভূরি অভিযোগ উঠে আসছে। আদালতের নির্দেশে প্রায় নিত্যদিনই চাকরি যাচ্ছে বহু ছেলেমেয়ের। যোগ্যতার নিরিখে নয়, বেআইনি ভাবে তাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সেই নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে মুখ খুললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  আইনজীবীদের সামনে কথায় কথায় চাকরি না খাওয়ার আর্জি জানালেন। 


মঙ্গলবার আলিপুর কোর্টের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন মমতা। সেখানেই চাকরিহারাদের নিয়ে মুখ খোলেন তিনি। বলেন, "আমি জীবনে জেনেশুনে কারও অন্যায় করিনি। ক্ষমতায় আসার পর একজন সিপিএম ক্যাডারেরও চাকরি খাইনি। তবে তোমরা কেন খাচ্ছো! দেওয়ার ক্ষমতা নেই, কাড়বার ক্ষমতা আছে! সিপিএম-এর আমলে অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের একটা রায় দেখেছিলাম। চাকরি মামলা ছিল। বলেছিলেন, সংশোধন করে নাও যদি ভুল থাকে। চাকরি খাওয়ার কথা বলেননি।"


নিচুতলায় বসে কেউ যদি অন্যায় করেও থাকেন, তার দায় কেন ছাত্রযৌবনকে নিতে হবে, প্রশ্ন তোলেন মমতা। বলেন, "এখন রোজ কথায় কথায় ৩ হাজার, ৪ হাজার চাকরি বাদ। নিচুতলায় যদি কেউ অন্যায় করে থাকে, আমাদের গণতান্ত্রিক দল। সবাই আমার তৃণমূলের ক্যাডার নয়, সরকারের ক্যাডার নয়...নিচে বসে যদি কেউ অন্যায় করে, আমি ন্য়ায়ের পথেই থাকব। ব্য়বস্থা নেব অন্যায়ের বিরুদ্ধে। এটা আমার চিরকালের স্বভাব। কালও দুই জন আত্মঘাতী হয়েছেন। অন্য কেউ ভুল করে থাকলে, তার দায়িত্ব তারা নেবে কেন? আজ একটা ছেলেমেয়ে বিয়ে করে সংসার করছে। চাকরি করে বলে বাবা-মাকে দেখতে পারছে। হঠাৎ করে চাকরি চলে গেলে খাবে কী?"


নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্যরা। যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ও গ্রেফতার হয়েছেন। মঙ্গলবারই শান্তনু এবং কুন্তলকে বহিষ্কার করেছে তৃণমূল। এ দিন মমতা বলেন, "অন্যায় করলে কড়া পদক্ষেপ করুন। কেউ ভুল করলে, নিজেকেই দায় নিতে হবে। কোনও দয়া নেই তাদের জন্য। ছেলেমেয়েগুলি যেন এই পরিস্থিতির শিকার না হন! আইন অনুযায়ী, চাকরি ফিরিয়ে দিন। সুযোগ দেওয়া হোক একবার। আলাদা ব্যবস্থা হোক। আপনারা সিদ্ধান্ত নিন। দরকার হলে আবার পরীক্ষা নিন। কাল জলপাইগুড়িতে আত্মঘাতী হয়েছেন একজন। কোন দলের সমর্থক জানি না। কিন্তু পরিবারটা কাঁদছে। মন কাঁদছে আমারও। কথায় কথায় লোকের চাকরি খাবেন না। এটা রাজনীতি নয়। চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা নেই, কিন্তু কিল মারার গোঁসাই হয়েছে কিছু রাজনৈতিক দল। কত মামলা পড়ে রয়েছে। রোজ শুধু জনস্বার্থ মামলার শুনানি হচ্ছে। জনস্বার্থ মামলা নয়, রাজনৈতিক স্বার্থজড়িত মামলা। সবাই নন, কেউ কেউ। আইনজীবীদের বলব, একটু ভেবে দেখবেন।"


এ দিন মমতা আবেগপ্রবণ সুরে মমতা আরও বলেন, "আমাকে আপনাদের পছন্দ না হতে পারে, আমার দলকে পছন্দ না হতে পারে, আমার সরকারকে না পছন্দ হতে পারে এত মানবিক কাজ করার পরও। যা ইচ্ছে দু'বেলা গালি দিন। আমাকে মারুন দরকার হলে। আমি কিছু মনে করব না। কিন্তু রাজ্যটাকে বদনাম করবেন না। ছাত্রযৌবনের খাওয়ার অধিকার কেড়ে নেবেন না দয়া করে। আমি মানবিক ভাবে সকলের পাশে ছিলাম,আছি, থাকব এমন মামলায়।"