কলকাতা: টানা অনশন, আন্দোলনের পর মধ্যস্থতা করেছিলেন খোদ রাজ্যপাল। তার পরও মহার্ঘ ভাতা নিয়ে নিজেদের অবস্থানে অনড় আন্দোলনকারীরা। রাজ্য সরকারকেই নরম হতে হবে বলে সাফ বার্তা দিয়েছেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, দাবি মতো বকেয়া মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পাশাপাশি, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন। সেই আবহে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বার্তা দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারের কাজ করে কেন্দ্রীয় সরকারের হারে মহার্ঘ ভাতার দাবি চলে না বলে জানালেন।
মঙ্গলবার আলিপুর কোর্টে আইনজীবীদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে মহার্ঘ ভাতার নিয়ে মন্তব্য করেন মমতা। তিনি জানান, আইনসিদ্ধ যে অধিকার, সেই অধিকার দেওয়ার পক্ষেই তিনি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় কিছু নিয়ম রয়েছে। রাজ্য সরকার চলে রাজ্যএর অর্থনৈতিক পরিকাঠামো এবং নিয়ম অনুযায়ী। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকাঠামো আবার আলাদা। তাই রাজ্যের কাজ করে কেন্দ্রের হারে মহার্ঘ ভাতার দাবি সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন মমতা।
এ দিন মমতা বলেন, "রাজ্য সরকারে পে কমিশন অনুযায়ী সব চলে। ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী টাকা দিয়েছে আমরা। কিন্তু আপনারা যদি বলেন, রাজ্যের কাজ করবেন, আর মহার্ঘ ভাতা নেবেন কেন্দ্রীয় সরকারের হারে, তা তো হয় না! কেন্দ্রের স্কুলের বেতনের পরিকাঠামো আলাদা। রাজ্যের আলাদা। ক্ষমতা থাকলে আমরা অবশ্যই, ভালবেসে দিই। সিপিএম ৩৩ শতাংশ দিয়েছিল। আমরা এসে ১০৬ শতাংশ দিয়েছি। ২০১৯ সালে পে কমিশনের সুপারিশে পুরোটাই দিয়েছি। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চলছে, বিনা পয়সায় স্কুল চলছে, ইউনিফর্ম দেওয়া হচ্ছে, পেনশন হচ্ছে, বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হচ্ছে, আর কত করতে পারে একটা সরকার!"
কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রাজ্যের ফারাকও বুঝিয়ে দেন মমতা। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রয়েছে। তারা টাকা ছাপাতে পারে। রাজ্য সরকারের সেই ক্ষমতা নেই। আগে করবাবদ অনেক টাকা হাতে আসত রাজ্যের। এখন একটাই কর, পণ্য ও পরিষেবা কর (GST)। কেন্দ্র সেই টাকা তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু রাজ্যকে প্রাপ্য টাকা মেটায় না। তাতে রাজ্যের অনেক ক্ষতি হচ্ছে বলেও জানান মমতা।
শুধু তাই নয়, তাঁর সরকারের আমলেই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা মাসের ১ তারিখে বেতন পেতে শুরু করেন বলেও জানান মমতা। তিনি বলেন, "আমি যখন বিরোধী নেত্রী ছিলাম, দেখেছি, শিক্ষক-শিক্ষিকারা মাসের ১ তারিখে বেতন পাচ্ছেন না। মাসের ১৫-২০ তারিখে বেতন পেতেন। কখনও কখনও আবার তিন মাস-ছ'মাসেও টাকা পেতেন না। পেনশন পেতেন না সরকারি কর্মীরা। আজ গর্ব করে বলতে পারি, এত ধার করে রেখে যাওয়ার পরও, মাসের এক তারিখে বেতন দিই আমরা, পেনশন দিই। যে সরকার এত মানবিক, বেশি ভাববেন না। "