কলকাতা: রাজ্যের বিজেপি নেতাদের মুখে বার বার শোনা গিয়েছে ডিসেম্বর মাসের ডেডলাইন (December Deadline)। সেই আবহেই রাজ্য়ে অশান্তি ঘনিয়ে আসতে পারে বলে এ বার আশঙ্কা প্রকাশ করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেই নিয়ে সকলকে সতর্ক করলেন তিনি। রাজ্যের মুখ্যসচিবকে সর্বত্র নাকা-চেকিং বাড়ানোর নির্দেশও দিলেন বলে খবর।


 মন্ত্রিসভার বৈঠকে সতর্কবার্তা মমতার


নবান্ন সূত্রে খবর, মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিজেপি (BJP) সন্ত্রাস ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মমতা। নভেম্বর-ডিসেম্বের মাসে রাজ্যে বিজেপি অশান্তি ছড়াতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সেই নিয়ে মন্ত্রীদের সঙ্গে বিশদ আলোচনা করেন মমতা। একই সঙ্গে রাজ্যের জায়গায় জায়গায় নাকা চেকিং বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। 


২০২১ সালে তৃতীয় বারের জন্য বিপুল জনসমর্থনে ভর করে ক্ষমতায় ফিরেছেন মমতা। ২০০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা রেখে নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়লেও, দুই অঙ্কের আসনসংখ্যাও পেরোতে পারেনি বিজেপি। বরং নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে গিয়েছিলেন যাঁরা, নির্বাচন মিটতে ফের জোড়াফুল শিবিরে ফিরে আসেন একে একে অনেকেই। 


এর পর উপ এবং পৌরসভা নির্বাচনেও আশাজনক ফল করতে পারেনি বিজেপি। কিন্তু মমতা এবং তাঁর তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আক্রমণ বাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে তারা। তা করতে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারী থেকে দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার, সকলের মুখেই বার বার উঠে এসেছে ডিসেম্বরসের কথা। তৃণমূল সরকারের পতনের ভবিষ্যদ্বাণী করতে শোনা গিয়েছে তাঁদের। 


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: জীবনের চেয়ে রাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ নয়, বাংলায় সিএএ করতে দেবেন না, সাফ জানালেন মমতা


সম্প্রতি শুভেন্দুকে বলতে শোনা যায়, "ছ'মাসও তৃণমূল কংগ্রেস থাকবে না৷ তার আগেই ডিসেম্বরের মধ্যে ঝাপ গুটিয়ে যাবে তৃণমূলের।" সুকান্ত বলেছিলেন, "ডিসেম্বরে এই সরকারটা জড়ভরত হয়ে যাবে।" সুকান্ত আরও বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী বলতে পারবেন তাঁর কীসের চিন্তা। তাঁর চিন্তার একটাই কারণ, সেটা হচ্ছে বিজেপি। আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে চিন্তাতেই রাখব। চিন্তার কিছু নেই। ডিসেম্বর হোক, জানুয়ারি হোক, ফেব্রুয়ারি হোক, ঠান্ডাও পড়বে, সরকার কাঁপবে।"


এমনকি দিলীপকেও বলতে শোনা যায়, “এই সরকারের কোনও ভরসা নেই। পদ্মপাতায় দলের মতো। এই আছে এই নেই। হয়ত ডিসেম্বরের পর বিধানসভা নির্বাচনটা আবার হতে পারে। বিসর্জন হতে পারে দিদিমণির।“সেই রেশ ধরে সম্প্রতি কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রকে বলতে শোনা যায়, "যুদ্ধ আসছে। যুদ্ধ কিন্তু আসছে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে। অনেক বড় যুদ্ধ।"


তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই রাজ্য রাজনীতিতে বড় ধরনের কোনও চমক অপেক্ষা করছে কিনা, প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সেই নিয়ে চর্চার মধ্যেই বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সকলকে সতর্ক করলেন মমতা। এ দিন নবান্নেই ছিল মন্ত্রিসভার বৈঠক। সূত্রের খবর, সেখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন যে, নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বিজেপি রাজ্যে অশান্তি পাকাতে পারে। এর পর মন্ত্রীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, "নিজেদের এলাকায় সতর্ক থাকুন। নজর রাখুন।"


এর আগে আশঙ্কার কথা শুনিয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষও। তাঁর বক্তব্য ছিল, "বিজেপির বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্ব ব্যাকডোর পলিটিক্স করছেন। অন্য কুৎসা করছেন। বঙ্গভঙ্গ করতে চাইছেন। আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল করতে চাইছেন। মুখ্যমন্ত্রী বার বার সব জায়গায় ছুটে যাচ্ছেন। বিজেপি ভাঙতে চাইছে। নিয়মিত ভাঙতে চাইছে। মানুষ বিজেপিকে দেখলেই প্রশ্ন করুক, কেন বাংলাকে ভাগ করতে চাইছ? এদের পুরোদস্তুর বয়কট করুক।"


বিজেপি নেতাদের মুখে বার বার ডিসেম্বরের ডেডলাইন


সামনের ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার আগে মমতার মুখেও অশান্তির সম্ভাবনার কথা উঠে আসায় জোর জল্পনা শুরু হয়েছে।