কলকাতা: বিধানসভা নির্বাচনের আগে গুজরাতের (Gujarat Assembly Elections 2022) দুই জেলায় বসবাসকারী বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিম মানুষজনকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র (Citizenship)। তার রেশ এসে পৌঁছেছে বাংলাতেও। এ রাজ্যেও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন চালু হয়ে গেল বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। নাগরিকত্ব নিয়ে সেই বিতর্কে এ বার মুখ খুললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। জানিয়ে দিলেন, বাংলায় এ সব করতে দেওয়া হবে না।
বাংলায় সিএএ করতে দেবেন না, সাফ জানালেন মমতা
ভোটমুখী গুজরাতে পড়শি দেশের সংখ্য়ালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়া নিয়ে বড়সড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বাংলার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতেও তাই চলে এসেছে সিএএ (CAA)। তা নিয়ে বুধবার মুখ খোলেন মমতা। তাঁর সাফ বক্তব্য, "এই সব রাজনীতি বন্ধ করো। গুজরাতে নির্বাচন আসছে বলে এসব করছে। আমরা এসব করতে দেব না। আমরা সবাই নাগরিক, এটাই আমার থিওরি। আপনি সব জানেন, আমিও সব জানি। দেশবাসীও সব জানেন।"
গুজরাত বিধানসভা নির্বাচন এমনিতেও উদ্বেগে রেখেছিল বিজেপি-কে। মোরবির সেতু বিপর্যয় সম্প্রতি তাতে অন্য মাত্রা যোগ করে। এর পরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে রাজ্যের দুই জেলায় বসবাসকারী অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয়, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, থেকে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী যাঁরা মেহসানা এবং আনন্দ জেলায় দীর্ঘদিন বাস করছেন, তাঁদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, নরেন্দ্র মোদি সরকারের আমলে তৈরি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে নয়, ১৯৫৫ সালের পুরনো নাগরিকত্ব আইনের আওতায় এই নাগরিকত্ব দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ সিএএ তৈরি হলেও, তার বিধি-নিয়ম এখনও ঠিক করা হয়নি। ফলে কার্যকর করা যায়নি সংশোধিত আইন।
আর সেই সূত্র ধরেই বাংলায় সিএএ চালুর জল্পনা উস্কে দেন শুভেন্দু। মঙ্গলবার তিনি বলেন, "এক যাত্রায় তো পৃথক ফল হয় না। গুজরাতে যখন কার্যকর হয়েছে, নিশ্চই রুল ফ্রেম করে ফেলেছে ভারত সরকার, আইন তো আগেই হয়ে গেছিল, পশ্চিমবঙ্গেও চালু হয়ে গেল।"
কিন্তু বাংলায় সিএএ কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা এ দিন খারিজ করে দেন মমতা। তিনি বলেন, "আমরা এ‘সবের বিরুদ্ধে, আমরা এর বিরোধিতা করি, গুজরাতে ভোটের জন্য এসব খেলা হচ্ছে, আমি আগেও যা বলেছি, আমি সেখানেই স্থির রয়েছি, ভোট বা রাজনীতি ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতটা মানুষের জীবন বা তাঁদের অধিকার গুরুত্বপূর্ণ।"
গুজরাতের নাগরিকত্বের রেশ এসে পড়ল বাংলাতেও
উল্লেখ্য, সিএএ-কে হাতিয়ার করে লোকসভা থেকে বিধানসভা ভোটে, পশ্চিমবঙ্গে বারবার ডিভিডেন্ট তুলেছে বিজেপি। তাতে তাদের ঢালাও ভোট দিয়েছে মতুয়ারা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সিএএ কার্যকর করা যায়নি। এই অবস্থায়, রাজ্যের দুয়ারে আরও একটি নির্বাচন। তাই গুজরাতের রেশ ধরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সিএএ নিয়ে ফের একবার সরগরম হচ্ছে রাজ্য রাজনীতি।