কমলকৃষ্ণ দে ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) বাংলা আকাদেমির দেওয়া সম্মান ফেরাচ্ছেন সাহিত্যিক রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায় (Ratna Rashid Banerjee)। তিনি জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) বাংলা আকাদেমির বিশেষ সম্মান দেওয়ার প্রতিবাদেই সম্মান ফিরিয়ে দিচ্ছেন। মমতার বই বেস্টসেলার, বন্ধুবৃত্তের নব্বই ভাগ লোকই আপনার একটাও বইয়ের নাম বলতে পারবেন না - ফেসবুকে সাহিত্যিককে পাল্টা দেবাংশুর (Debangshu Bhattacharya)।


মুখ্যমন্ত্রীকে (Cm Mamata ) বিশেষ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার দেওয়ার প্রতিবাদ। বাংলা আকাদেমির সম্মান (Bangla Academy Literary Award) ফেরাচ্ছেন সাহিত্যিক রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায় (Ratna Rashid Banerjee)। সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) বিশেষ সম্মান দিয়েছে বাংলা আকাদেমি। পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) বাংলা আকাদেমির সভাপতি, মন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, এবার থেকে তিন বছর অন্তর দেওয়া হবে এই পুরস্কার। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি যাঁরা সাহিত্য চর্চা করছেন, তাঁদেরকে জানানো হবে সম্মান। 


প্রথম বছর ‘কবিতাবিতান’ বইয়ের জন্য ‘বিশেষ বাংলা আকাদেমি পুরস্কারে’ সম্মানিত করা হয় মুখ্যমন্ত্রীকে (Cm Mamata Banerjee)। যদিও মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতে এই পুরস্কার নেননি। শিক্ষামন্ত্রীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন তথ্য সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন।


মুখ্যমন্ত্রীকে এই পুরস্কার দেওয়ার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বর্ধমানের ভাঙাকুঠি এলাকার বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করেন সাহিত্যিক রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায়। জানান, বাংলা আকাদেমির সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার কথা।


সাহিত্যিক রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, আমি আমার সম্মানকে ফেরত দিচ্ছি। প্রতিবাদ জানিয়েছে। আমার বিচারে উনি সাহিত্যিক নন, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর লেখাকে লেখা বলে মনে করি না। লিখলেই হল? সম্মান ফেরত দিচ্ছি প্রতিবাদ স্বরূপ। 


২০০৯ ও ২০১৯ সালে আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, বাংলা আকাদেমিকে মেল করে ২০১৯ সালের পুরস্কার ফেরানোর কথা জানিয়ে দিয়েছেন। সাহিত্যিক জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলা আকাদেমির বিশেষ সম্মান দেওয়ার প্রতিবাদেই তিনি সম্মান ফিরিয়ে দিচ্ছেন। 


সাহিত্যিক  রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, আপনার কি মনে হয়, দেওয়া উচিত হয়নি? অবশ্যই। আমার বিচারে উনি সাহিত্যিক নন। আমাকে ডাকলেই তো নাচব না। আমার কোমরের জোর বুঝে নাচব। ডাকলেই আমি যাব কেন?


ফেসবুকে সাহিত্যিককে জবাব দিয়েছেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু ভট্টাচার্য। তিনি লিখেছেন, রত্নাদেবী, খুব ভুল না করলে আপনি গত বিধানসভা নির্বাচনে ‘নো ভোট টু বিজেপি’-র হয়ে সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন। মন্তব্যও করতেন। বিজেপি এলে আপনাদের অবস্থা কী হবে এই নিয়ে যারপরনাই আশঙ্কিত ছিলেন এবং থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ, সিপিএম আমলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন আপনি আর পারিবারিকভাবে সিপিএমটাও করতেন। তাই জানেন কোনও স্বৈরাচারী আর শোষক শক্তি যখন ক্ষমতা পায়, তখন বিরুদ্ধ কণ্ঠের অবস্থা ঠিক কী হয়। 


এখানেই থামেননি দেবাংশু। তিনি আরও লিখেছেন, যাঁকে এই সামান্য পুরস্কার দেওয়া আপনার সত্যের অপলাপ মনে হয়েছে তাঁর বই বেস্টসেলার। আর আপনার বন্ধুবৃত্তের নব্বই ভাগ লোকই আপনার একটা বইয়ের নামও মনে করতে পারবেন না। আপনার এই হঠকারী সিদ্ধান্তে পাওয়া দিন কয়েকের প্রচারের আলো আপনার ভবিষ্যৎ জীবনে কোনও আক্ষেপের কারণ যেন না হয় প্রার্থনা করি। অন্তত ছাপ ফেলা বা মনে রাখার মতো কিছু লিখুন যাতে পুরস্কার ফেরাবার বিতর্কের বাইরেও বাংলার মানুষ জানতে পারে, চিনতে পারে।



তবে শুধু রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায় নন, ঘটনার প্রতিবাদে সাহিত্য অকাদেমির বাংলা উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন লেখক এবং সম্পাদক অনাদিরঞ্জন বিশ্বাস।