আশাবুল হোসেন, শিবাশিস মৌলিক, রুমা পাল, কলকাতা : প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি ও পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে ( Manik hattacharya ) গ্রেফতার করেছে ED। তাঁকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে, ১৪ দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। মানিক ভট্টাচার্যকে নিয়ে আদালতে একাধিক চাঞ্চল্যকর দাবি করল ইডি।
মানিক ভট্টাচার্যের বাড়িতে কার চিঠি
' যারা টাকা দিয়েছে, তারা স্কুলে শিক্ষক হিসাবে পড়াচ্ছে এবং আমাদের রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যত নষ্ট করছে। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যত নষ্ট করছে। যোগ্য প্রার্থীরা ৫৭৬ দিন ধরে ধর্না দিচ্ছে। এমনকী লক্ষ্মীপুজোর দিন কাঁদছে। আপনি কি মনে করেন, এটা শুধু একটা অপরাধ? ' মানিক ভট্টাচার্যকে হেফাজতে চেয়ে মঙ্গলবার এই মন্তব্য করেন ED’র আইনজীবী। এরইসঙ্গে অত্যন্ত বিস্ফোরক দাবি করে তিনি বলেন, ' ইডি মানিক ভট্টাচার্যের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে নথি বাজেয়াপ্ত করেছিল। তাতে দেখা যায় মানিক ভট্টাচার্য একটি চিঠি পেয়েছেন, যে চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করেও লেখা হয়েছিল। সেই চিঠি অনুযায়ী, ৪৪ জনকে শিক্ষকের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৭ লক্ষ টাকা করে নেওয়া হয়।'
'পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাইরের লোকেদের জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট'
এই টাকা যুব তৃণমূলের কোনও একজন সাধারণ সম্পাদক সংগ্রহ করছিলেন। এরইসঙ্গে আদালতে ইডি দাবি করেন, মেসার্স অ্যাকিউর কনসালটেন্সি সার্ভিসেসের মালিক মানিক ভট্টাচার্যের ছেলে। এই কোম্পানির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালে, এই টাকা বেশ কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাবদ নেওয়া হয়। কিন্তু, টাকা নেওয়ার পর কোনও কাজ হয়নি। বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও পাওয়া গেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, মানিক ভট্টাচার্যের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাইরের লোকেদের জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট রয়েছে। অপরিচিতদের সঙ্গেও অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সেখানে প্রচুর টাকা রয়েছে। এটা খতিয়ে দেখতে হবে।
মানিকের বাড়ির ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে ২টি ফোল্ডার পাওয়া গেছে। সেখান থেকে ৬১জন প্রার্থীর নাম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৫৫ জনের নাম তালিকায় যুক্ত করা হয়েছিল। তা, কেন হল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।
সম্পত্তির তথ্য, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুঁজে বের করতে হবে। কেন বাইরের লোকের সঙ্গে অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সেই তথ্য খুঁজে বের করতে হবে। পাল্টা, মানিক ভট্টাচার্যের আইনজীবী বলেন, ' তথ্য যাচাইয়ের জন্য তলব করে, গ্রেফতার করেছে ED। অথচ ED দাবি করছে, 'অসহযোগিতা করেছে। তাই গ্রেফতার। ১০-১২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে জেরা করে গ্রেফতার করা হয়েছে। '
এই মামলায়, চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। মূল মামলা দেখছে CBI। এর আগে, ৬ বার কেন্দ্রীয় সংস্থার অফিসে গেছেন মানিক। তাই অসহযোগিতার কোনও প্রশ্নই নেই। কোনও নগদের লেনদেন নেই। যা লেনদেন হয়েছে তা চেকে হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রক্ষাকবচ সত্ত্বেও গ্রেফতার।
ED’র হাতে মানিক ভট্টাচার্যের গ্রেফতারির দিন ২০১৪’র প্রাথমিক TET উত্তীর্ণদের ধর্নামঞ্চে দেখা গেল উৎসবের ছবি।বাজল শাঁখ! উঠল স্লোগান! অভিনব প্রতিবাদে সামিল হলেন চাকরিপ্রার্থীরা। ইডির অফিসার থেকে পুলিশ। দুর্গা থেকে অসুর। প্রতীকী প্রতিবাদে বাদ গেল না কিছুই !
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পুজোর আগে পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ গ্রেফতার হন ৯ জন। আর পুজো মিটতেই গ্রেফতার হলেন মানিক ভট্টাচার্য। এরপর কে? এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্য রাজনীতিতে।