প্রকাশ সিনহা, কলকাতা: কুন্তল ঘোষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি চেনেন না। তাঁরাও তাঁকে চেনেন না। এদিন আদালতে যাওয়ার পথে দাবি করলেন মানিক ভট্টাচার্য। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিটে ভুরি ভুরি তথ্যপ্রমাণ পেশ করেছে সিবিআই ও ইডি। নিয়োগ দুর্নীতির টাকায় তিনি ও তাঁর পরিবার লাভবান হয়েছে কি না জানতে চাইলে মানিকের পাল্টা প্রশ্ন, এই তথ্য আপনাকে কে দিয়েছে? নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে আজ ব্যাঙ্কশাল কোর্টে ইডি-র বিশেষ আদালতে পেশ করা হয় মানিক ভট্টাচার্যকে। টাকা নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে হাত নেড়ে না বলেন মানিক। 


সাংবাদিক যখন মানিক ভট্টাচার্যকে প্রশ্ন করছেন, কুন্তল-শান্তনুকে চেনেন কিনা, বারবার হাত নেড়ে মানিক বুঝিয়ে দিলেন, না কিন্তু, নিয়োগ দুর্নীতির ৩ চাঁই হিসেবে নাম উঠে এসেছে মানিক ভট্টাচার্য -কুন্তল ঘোষ-শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের। 


আর, গ্রেফতারির ৭ মাস পর কুন্তল-শান্তনুকে চেনেনই না বলে আদালতে ঢোকার সময় দাবি করলেন মানিক। কুন্তল-শান্তনুর সঙ্গে মানিকের জুটি বেঁধে দুর্নীতির কথা ইডির চার্জশিটে ছত্রে ছত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। 


ED সূত্রে দাবি, অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি দিতে সরাসরি মানিক ভট্টাচার্যর কাছে সুপারিশ করতেন শান্তনু!মানিকের বাড়ির মতো শান্তনুর বলাগড়ের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েও প্রচুর চাকরিপ্রার্থীর নামের তালিকা উদ্ধার করেছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। 


ED সূত্রে দাবি, চোখে পড়ার মতো বিষয় হল, মানিক ভট্টাচার্যর ফ্ল্যাট থেকে যে তালিকা উদ্ধার হয়, তার মধ্যে থাকা বেশ কিছু নাম ছিল শান্তনুর বাড়ি থেকে মেলা তালিকাতেও।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে আরও দাবি, শান্তনুর সুপারিশে ৩১২ জনের মধ্যে ১০ জনকে স্কুলে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন মানিক!


অযোগ্য প্রার্থীদের দেওয়া টাকা কখনও কুন্তল ঘোষ মারফৎ শান্তনুর হাতে আসত। আবার কখনও সরাসরি চাকরিপ্রার্থীদের থেকে টাকা নিতেন শান্তনুও। এর আগে রিমান্ড লেটারে ED-র তরফে দাবি করা হয়,ধৃত কুন্তল ঘোষের বয়ান থেকে জানা গেছে যে, ২০১২ এবং ২০১৪-র TET-এ বহু অযোগ্য প্রার্থীকে পাস করিয়ে দিয়ে, তাঁদের থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা তুলেছিলেন অয়ন শীল।


গোটা বিষয়টা জানতেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। গত সপ্তাহেই, প্রশিক্ষণহীন চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেওয়ার সময় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় বলেন, মানিক ভট্টাচার্য ও তাঁর দুর্নীতির জন্য এই অবস্থা। 


এই ৩৬ হাজার শূন্য়পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য় যে টাকা লাগবে, তা চাইলে মানিক ভট্টাচার্যর থেকে নিতে পারে রাজ্য় সরকার। বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল আদালত থেকে বেরনোর সময় এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন মানিক ভট্টাচার্য। 


শুধু মানিকই নন, তাঁরই দুর্নীতির অভিযোগে জেল খাটছেন তাঁর স্ত্রী-পুত্রও... এই পরিস্থিতিতে, নিয়োগ প্রসঙ্গে আবারও বিস্ফোরক মন্তব্য করে কীসের ইঙ্গিত দিতে চাইলেন জেলবন্দি মানিক? এদিন, ৩ অগাস্ট পর্যন্ত তাঁর জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।