ঝিলম করঞ্জাই : ‘বিষাক্ত’ স্যালাইনে প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ, অসুস্থ আরও ৩ প্রসূতি। তাঁদের মধ্যে এক প্রসূতির অবস্থা আশঙ্কাজনক। কেন অসুস্থ প্রসূতিদের শারীরিক অবস্থা কেমন রয়েছে, এখন কেমন রয়েছেন তাঁরা, তার তথ্য দেওয়া হচ্ছে না, এই অভিযোগ তুলে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বাম এবং কংগ্রেস। গতকালও হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল এসএফআই। আজ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে একযোগে বিক্ষোভে শামিল হয়েছে এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই। অসুস্থ প্রসূতিদের শারীরিক অবস্থা কেমন রয়েছে তা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চান বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু তাদের অভিযোগ, হাসপাতালের তরফে কেউই কথা বলতে রাজি নন। এরই প্রতিবাদে আঁচ বাড়তে থাকে বিক্ষোভের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামে পুলিশ বাহিনী। সেই সময়ে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়েছে বাম ছাত্র-যুব সংগঠনের সদস্যদের। পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে সাময়িক ভাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস কর্মীরাও।
মেদিনীপুর মেডিক্যালে এক প্রসূতির মৃত্যু এবং আরও চার প্রসূতির গুরুতর অসুস্থ হওয়া নিয়ে বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে রাজ্য়ের স্বাস্থ্য় ব্য়বস্থা। অভিযোগ, যে স্য়ালাইন ব্য়বহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল স্বাস্থ্য় দফতর, সেই স্য়ালাইন প্রয়োগের পরই, প্রসূতির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেই যে মৃত্য়ু, সূত্রের খবর, মেদিনীপুর মেডিক্য়ালের রিপোর্টেও তার উল্লেখ রয়েছে। এই ঘটনার তদন্তে আজ মেদিনীপুর গিয়েছে চিকিৎসকদের ১৩ সদস্য়ের টিম। এই দলে রয়েছেন স্বাস্থ্য় দফতরের ৩ পদস্থ আধিকারিক, বিভিন্ন বিভাগের ৬ জন চিকিৎসক। দলে আছেন রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের চার জন ড্রাগ ইনস্পেক্টরও। ওষুধ সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহ করে কেন এই ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখবেন ড্রাগ ইনস্পেক্টরা। যেসব প্রসূতি অসুস্থ তাঁদের সঠিক ভাবে চিকিৎসা চলছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে। তিন প্রসূতি ভর্তি রয়েছেন ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট বা সিসিইউতে। একজন রয়েছেন ভেন্টিলেটরি সাপোর্টে। তাঁর অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর।
১৩ সদস্যের মেডিক্যাল টিম তিনটি ভাগে বিভক্ত। একটি দলে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা রয়েছে। আরেকটি দলে রয়েছেন মাল্টিডিসিপ্লিনারি চিকিৎসা। সেখানে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ, মাইক্রোবায়োলজিস্ট, কার্ডিওলজিস্ট, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। তৃতীয় দলে রয়েছেন রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের চার জন উচ্চপদস্থ ইনস্পেক্টর। প্রশাসনিক কর্তারা খোঁজ নিচ্ছেন কোথা থেকে এই যে নির্দিষ্ট ধরনের স্যালাইন যা সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ তা কীভাবে ব্যবহার হল, কোথা থেকে কীভাবে আনা হয়েছিল, কোথায় রাখা হয়েছিল- এইসব দিকগুলির। চিকিৎসকরা খতিয়ে দেখছেন ভর্তি থাকা চার প্রসূতির চিকিৎসা ঠিক ভাবে হচ্ছে কিনা, সেই বিষয়ে। এই প্রসূতিদের অন্য কোথাও স্থানান্তরের প্রয়োজন রয়েছে কিনা, তাঁদের সিজার কারা করেছিলেন, অপারেশনের পরবর্তীতে কী কী হয়েছিল, সবই খতিয়ে দেখছেন চিকিৎসকদের দল। এখানে উল্লেখ্য, অভিযোগ উঠেছে সিজার করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররাই। সেই অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।