পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা: 'সিঁড়িতে জুতো পরাচ্ছি। তখনও বলে দিলাম, বাবা ট্রাফিক সিগন্যাল বানানটা...আসলে বানানটা একটু শক্ত তো', বলতে বলতে গলা ধরে আসে দীপিকার। বেহালার বাসিন্দা দীপিকা সরকার। গত শুক্রবার এক ট্রাফিক সিগনালেই শেষ হয়ে গিয়েছে তাঁর ৭ বছরের ছেলে, সৌরনীলের জীবন। কী অদ্ভুত! সে দিন স্কুলে যাওয়ার পথে মা-কে এই ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়েই শেষ প্রশ্ন করেছিল খুদে। সন্তান-হারানোর বিষাদের মধ্যে সেই স্মৃতি কুরে কুরে খায় দীপিকাকে।


বদলেছে ছবি,সৌরনীল ধরাছোঁয়ার বাইরে...
শুক্রবারের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর পরের দিনই অনেকটাই বদলে গিয়েছে বেহালা চৌরাস্তার ছবি। যে ডায়মন্ড হারবার রোডে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, পর দিনই সেই রোডের ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পথচারীদের রাস্তা পারাপার, যান চলাচল ব্যবস্থার তদারকি করেন ডায়মন্ড হারবারে ওসি(ট্রাফিক) অমলেন্দু চক্রবর্তী। সন্তান-শোকে পাথর দীপিকা অবশ্য এবিপি আনন্দকে বললেন, 'পরিবর্তন হয়েছে, তবে আগে হলে আমার ছেলেটা চলে যেত না। আমার সঙ্গে থাকত।' বাস্তবিক। ছোট দেহগুলোই যে সবচেয়ে ভারী হয়, তা মা-বাবার থেকে কঠিন ভাবে আর কে বোঝেন? সেই ভারই বইতে হচ্ছে বেহালার সরকার পরিবারকে। বিষাদের এমন মুহূর্তেও দীপিকা সরকার বললেন, 'তবে বাকি বাচ্চাগুলো বেঁচে যাবে। তাদের মায়েদের কোল আমার মতো হবে না, বলুন?'  বলতে বলতে ভেঙে পড়েন পুত্রহারা মা। তাঁর বুকফাটা কান্নায় বার বার ফিরে আসে একটাই প্রশ্ন, কেন অকালে চলে যেতে হল ছোট শিশুটিকে?

শেষ কথা...
সৌরনীলের মায়ের কথায়, 'ওদের স্বাস্থ্য বলে একটি বিষয় রয়েছে যেখানে ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ে পড়তে হয়। কোন রংয়ের আলো হলে রাস্তা পেরোতে হবে, জেব্রা ক্রসিং, ইত্যাদি ওদের পড়ার বিষয়। ট্রাফিক সিগন্যাল বানানটি একটু কঠিন তো...আর ওর বানান ভুল হয়। সিঁড়িতে জুতো পরাচ্ছি। তাই তখন বলে দিলাম, বাবা ট্রাফিক সিগন্যাল বানানটা...সদ্য শুনে গেলে বাচ্চার মাথায় থাকে...আর আমার ছেলেটা লেখাপড়ায় বড় ভালো ছিল, ফুল মার্কস পেত জানেন তো? মাটির নিচে চলে গেল...' ডুকরে ওঠেন দীপিকা। যে সিগন্যাল নিয়ে মার কাছ থেকে জেনে গিয়েছিল সৌরনীল, সেই সিগন্যালেই যে জীবন চলে যাবে, জানা ছিল না কারও। বাড়িতে বসে এখন এই সব স্মৃতিই ফিরে আসছে, আর ভেবে চলেছেন পুত্রহারা মা। পরিবর্তন হল ঠিকই...একটু আগে হলে ছেলেটা হয়তো... 


আরও পড়ুন:ভোট মিটলেও বারুদের স্তূপে বীরভূম, খয়রাশোলে উদ্ধার তাজা বোমা, রামপুরহাটে হদিস বিস্ফোরকের