কলকাতা: কুকুরের মালিকানা নিয়ে বিবাদ থেকে ক্যাশ ফর কোয়েশ্চেন বিতর্ক। মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra) এবং তাঁর প্রাক্তন বন্ধু জয় অনন্ত দেহাদ্রাইয়ের দ্বন্দ্ব কীভাবে পৌঁছে গেল সংসদের অন্দরে? নেপথ্যে কোন কাহিনি?


দ্বন্দ্ব কীভাবে পৌঁছে গেল সংসদের অন্দরে? রেশন দুর্নীতিতে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতারিতে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি। আর তারই মধ্যে 'ক্যাশ ফর কোয়েশ্চেন' বিতর্কে, কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রর এথিক্স কমিটিতে হাজিরা নিয়ে সরগরম জাতীয় রাজনীতির আঙিনা। বৈঠকে তোলপাড়। প্রশ্নের ধরণে মেজাজ হারিয়ে মাঝপথেই বৈঠক ছাড়লেন মহুয়া মৈত্র ও এথিক্স কমিটির বিজেপি বিরোধী দলগুলির সদস্যরা।


হেনরি নামে রটওয়েলার প্রজাতির এই কুকুরের মালিকানাকে কেন্দ্র করে মহুয়া মৈত্র আর তাঁর প্রাক্তন বন্ধু জয় অনন্ত দেহাদ্রাইয়ের বিবাদ। থানা-পুলিশের গণ্ডি ছাড়িয়ে যে সংসদ অবধি পৌঁছে যাবে, তা কেউ টেরই পাননি।১৪ অক্টোবর দুর্নীতি ও আর্থিক তছরুপের অভিযোগ জানিয়ে, লোকসভার অধ্যক্ষ এবং সিবিআইকে চিঠি দেন মহুয়া মৈত্রর প্রাক্তন বন্ধু জয় অনন্ত দেহাদ্রাই। পরদিন, অর্থাৎ ১৫ অক্টোবর, মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে লোকসভার অধ্যক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে।

জয়ের চিঠির প্রসঙ্গ তুলে গোড্ডার বিজেপি সাংসদ অভিযোগ করেন যে, শিল্পপতি দর্শন হিরানন্দানির কাছ থেকে টাকা ও উপহারের নিয়ে, সংসদে আদানি গোষ্ঠী নিয়ে প্রশ্ন করে সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেলতে চেয়েছিলেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ। কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রীকে অশ্বিনী বৈষ্ণবকেও চিঠি দিয়ে নিশিকান্ত দুবে অভিযোগ করেন যে, মহুয়া সংসদের ওয়েবসাইটের লগ ইন আইডি ও পাসওয়ার্ডও হীরানন্দানিকে দিয়ে দিয়েছেন। কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে তদন্ত এবং লোকসভার সদস্যপদ খারিজের দাবি তোলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত।

আচমকাই শিল্পপতি দর্শন হিরানন্দানিও আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার জন্য় মহুয়াকে উপহার দেওয়ার কথা স্বীকার করে নেন। উৎসবের আবহেই এই সমস্ত অভিযোগ নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে জাতীয় রাজনীতি। ২৬ অক্টোবর, বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে এবং আইনজীবী জয় অনন্ত দেহাদ্রাইয়ের বক্তব্য নথিবদ্ধ করে সংসদের এথিক্স কমিটি। ৩১ অক্টোবর তলব করা হয় মহুয়া মৈত্রকে। কিন্তু, নিজের নির্বাচনী এলাকা কৃষ্ণনগরে বিজয়া দশমীর পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচির কথা বলে, এথিক্স কমিটির সামনে উপস্থিত হননি মহুয়া।এথিক্স কমিটি যাতে তাঁকে ৫ নভেম্বরের পরে ডাকে, সে অনুরোধ জানান মহুয়া মৈত্র।কিন্তু, কৃষ্ণনগরের সাংসদকে চিঠি লিখে ২ নভেম্বরই উপস্থিত হতে বলেন এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান।


এর আগে তলব প্রসঙ্গে মহুয়া মৈত্র বলেন, “এটা বিজেপির নোংরা রাজনীতি। আমার মাথার একটা চুলও ছুঁতে পারবে না। এটা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, এরা যে কোনওভাবে মুখ বন্ধ করাতে চায়। ওরা খুব জোর সাসপেন্ড রেকমেন্ড করতে পারে। স্পিকার সেটা নিয়ে শীতকালীন অধিবেশনে পেশ করবে। ওরা বলবে সাসপেন্ড করো। খুব বেশি হলে ভাবছে, শীতকালীন অধিবেশনে ঢুকতে দেবে না। ওরা আমাকে ঝাঁসি কি রানি করে দিচ্ছে। এটা ওদের বিশাল ভুল।’’

দীর্ঘ টানাপোড়েনের পরে বৃহস্পতিবার লোকসভার এথিক্স কমিটির মুখোমুখি হন মহুয়া মৈত্র। আর সেখানেও তুলকালাম। তবে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংসদে প্রশ্ন করা নিয়ে বিজেপি যখন মহুয়ার বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত, তখন 'ক্যাশ ফর কোয়েশ্চেন' বিতর্কে এখনও মুখ খোলেননি মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ও অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়।


আরও পড়ুন: Weather Update : শীত-প্রত্যাশায় সুখবর, বঙ্গে বৃষ্টি-যোগও, কী জানাল আবহাওয়া দফতর ?