কলকাতা: পুরাতনকে সরিয়ে রেখে নতুন তৃণমূল গড়ার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা চোখে পড়ছে দলের তরফে। তাতে আদি-নব্য সঙ্ঘাতের প্রসঙ্গও উঠে আসছে ঘুরেফিরে। কিন্তু বৃহস্পতিবার, ভাইফোঁটার (Bhaiphonta) দিন সেই ‘আদি’ তৃণমূলের (TMC) দুই নেতাকে গিরেই সরগরম রইল রাজ্য রাজনীতি। মুকুল রায় (Mukul Roy) এবং শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovon Chatterjee) বৃহস্পতিবার কালীঘাটে (Kalighat) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) কাছে ভাইফোঁটা নিতে গিয়েছিলেন। তাতেই তৃণমূলে দু’জনের সক্রিয়তা বাড়তে পারে বলে জল্পনা শুরু হয়েছে (Panchayat Elections 2023)।
ভাইফোঁটা নিতে মমতার বাড়িতে হাজির মুকুল-শোভন
বৃহস্পতিবার হরিয়ানায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ডাকা বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার কথা ছিল মমতার। কিন্তু রাজ্যের প্রতিনিধি হিসেবে এডিজি পদপর্যাদার এক অফিসারকে সেখানে পাঠিয়ে, বৈঠক এড়িয়েছেন তিনি। বরং এ দিন কালীঘাটের বাড়িতে ভাইফোঁটা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন তিনি। আর সেখানে মুকুল এবং শোভনের পদার্পণই এখন আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে।
তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে গিয়ে ফের শিকড়ে ফিরেছেন মুকুল। কিন্তু দলে প্রত্যাবর্তন ঘটলেও, বাংলার রাজনীতিতে আগের সেই দাপট আর দেখা যায়নি তাঁর। বরং স্ত্রী-বিয়োগ, শারীরিক অসুস্থতার জেরে বেশ কিছু দিন অন্তরালেই ছিলেন মুকুল। তাতে ছেদ পড়ল এ দিন। প্রায় আট বছর পর মমতার কাছে ভাইফোঁটা নিতে গেলেন তিনি। কালীঘাট থেকে বেরনোর সময় শোভনের সঙ্গেও এক ফ্রেমে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
আর এই ছবি ঘিরে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তৃণমূলে কি দানা বাঁধছে নতুন সমীকরণ? শোভন চট্টোপাধ্যায়ের তৃণমূলে ফেরা কি সময়ের অপেক্ষা? পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কি মুকুল রায়কে ফের সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যেতে পারে? এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি মুকুল। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেও, কিছু খোলসা করেননি শোভনও।
বরং সক্রিয়তার প্রশ্নে শোভন বলেন, ‘‘দিদির যা সিগনাল দেওয়ার, যে ভাবে, যে কথা, যে ভাবে, যেখানে বলেছেন, সেটা বাস্তবায়িত হলেই, Lets see। ওঁর কোনও কথা, আমি কখনও আমি তো অমান্য করিনি।’’ তাহলে কি ফের সক্রিয় রাজনীতিতে তাঁকে দেখতে পাবেন বাংলার মানুষ! শোভনের জবাব, ‘‘নিশ্চয়ই স্থান, কাল, পাত্র, ঠিক যখনই ক্লিক করে যাবে, দেখে নেবেন। যখনই ডাকবে, আমরা তো আসিই। কথা হয়, বার্তা হয়।’’
মুকুল এবং শোভন, দু’জনেই মমতার পুরনো ছায়াসঙ্গী। আর এই দু’জনেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের নভেম্বরে বিজেপি-তে যোগ দেন মুকুল। শোভন এবং তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি-তে যোগ দেন ২০১৯ সালের অগাস্টে। শোভন যদিও সে বছরও মমতার কাছে ভাইফোঁটা নিতে গিয়েছিলেন। তার পর নবান্নেও দেখা যায় তাঁদের।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বাড়তে চলেছে সক্রিয়তা!
তবে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর তৃণমূলের ফিরলেও, ‘দিদি’র কাছে মুকুলের ভাইফোঁটা নেওয়া হয়নি বহুদিন। বরং উপনির্বাচনের সময় বেফাঁস মন্তব্যের পর থেকে একরকম আড়ালেই ছিলেন তিনি। তার উপর, বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির দায়িত্ব পাওয়ায় দলত্যাগ আইনে তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে উদ্যোগী হয় বিজেপি। যদিও সম্প্রতি কালীঘাটে ফের তাঁর আনাগোনা বেড়েছে। চলতি মাসের শুরুতেই, বিজয়ার প্রণাম সারতে মমতার কালীঘাটের বাড়িতে পৌঁছন মুকুল। সেখানে মমতার সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা তাঁর বৈঠকও হয় বলে শোনা যায়। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঠিক আগে মমতার কাছে মুকুলের ভাইফোঁটা নিতে যাওয়া নেহাত কাকতালীয় ঘটনা নয় বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।