কলকাতা: ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের ১০৮টি পুরসভায় নির্বাচন (Municipal Election)। শুক্রবার তার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করল তৃণমূল (TMC Candidate List)। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে জানান,  শতাধিক পুরসভার ভোটে কার্যকর হল তৃণমূলের ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি।  পুরভোটে টিকিট দেওয়া হয়নি কোনও তৃণমূল বিধায়ককে। পাশাপাশি একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে টিকিট দেওয়ার নীতি থেকেও সরে এসেছে তৃণমূল।


আর এই তালিকা ঘোষণার পরই গরমিল দেখা যায় বলে দলীয় সূত্রে খবর। ১০৮টি পুরসভার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা নিয়ে বেনজির বিভ্রাট দেখা যায়।  এরফলে প্রশ্ন উঠেছে, তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে ভোটকুশলী সংস্থার বিরোধেই এই গরমিল ?  তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব জানায় যে,  ‘ওয়েবসাইটে দেওয়া প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত নয়।  পার্থ-সুব্রত বক্সীর সই করা প্রার্থী তালিকাই চূড়ান্ত।  যে তালিকায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদন রয়েছে। চূড়ান্ত তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে জেলা সভাপতিদের কাছে।  ‘চূড়ান্ত না হওয়া সত্ত্বেও কেন তালিকা প্রকাশ ?’ তা নিয়ে দলের অন্দরেই ক্ষোভ  তৈরি হয়েছে বলে সূত্রের খবর। 


এদিকে, প্রার্থীতালিকা প্রকাশ হতেই  জায়গায়, জায়গায় বিক্ষোভ চলে তৃণমূলের একাংশের। কামারহাটি পুরসভার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরেই অসন্তোষ ছড়ায়।  কামারহাটি বিধায়ক মদন মিত্রর কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের একাংশ। বহরমপুর পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলে।  প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় বিক্ষোভ  তৃণমূলের একাংশের । মালবাজারে প্রার্থী-বিক্ষোভে জাতীয় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয়। ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী পুলিন গোলদারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়। কোচবিহারেও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী বদলের দাবিতে বিক্ষোভ হয়। উত্তর ২৪ পরগনার খড়দাতেও বিক্ষোভ দলেরই একাংশের। বিটি রোডে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ হয়।  বাঁকুড়ায় ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলরকে নিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পরোক্ষে দল ছাড়ারও হুমকি দেন কেউ কেউ।  বাঁকুড়া, হুগলির আরামবাগ, পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি সহ বিভিন্ন জায়গা থেকেই বিক্ষোভের খবর পাওয়া গিয়েছে। 


তৃণমূলের অন্দরের এই অসন্তোষকে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কারণ, একবার জিতলে আগামী পাঁচ বছরে এলাকার কাটমানি বা অন্য অবৈধ উপায় থেকে প্রাপ্ত টাকাপয়সার অধিকার অর্জন করা যাবে। আর এ জন্যই এই লড়াই। পাঁচ বছরে কার আঙুল ফুলে কলা গাছ হবে, তার জন্যই এই লড়াই। আগামী দিনে তা আরও বাড়বে। তৃণমূলের মুষল পর্ব শুরু হয়ে যাবে।


অন্যদিকে, সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ক্ষমতা ভাগাভাগির কেন্দ্র এখন পুরসভাগুলি। ক্ষমতার প্রাণভ্রমরা ওখানেই রয়েছে। তাই ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে কে কাকে টেক্কা দেবে, এর জন্যই এখন তৃণমূলে লড়াই চলছে। আর যুক্তিহীনভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হল একটা কথা যে, একই পরিবার থেকে দুজন প্রার্থী হবে না। বিধায়করা প্রার্থী হবে না। এখন গ্রাম, মফস্বলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, কলকাতায় তো এমনটা আকছার হয়েছে। তাহলে তাদের ওখানে হবে না কেন। এ সব নিয়েই বিক্ষোভ।