পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা: এবার সিবিআইয়ের (CBI) হাতে দুর্নীতিতে জীবনের জীবন-পঞ্জি। কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাবি, ২০১৪-২০১৯ পর্যন্ত নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত ছিলেন জীবনকৃষ্ণ সাহা। এই সময়ে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রায় ৪০০-৫৫০ জনের চাকরি বিক্রি হয়েছিল। সিবিআইয়ের দাবি, মূলত অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) হাত ধরেই নিয়োগ-দুর্নীতি চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠে জীবনের। বীরভূম (Birbhum) ছাড়িয়ে অন্য জেলাতেও ছড়িয়ে যায় চাকরি-বিক্রির জাল। মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) চাকরি-বিক্রিতে জীবন ভরসা করতেন ছোটবেলার বন্ধু কৌশিক ঘোষকে। কৌশিক ইতিমধ্যেই জেলে রয়েছেন। তাঁকে জেরা করেই বড়ঞার তৃণমূল বিধায়কের নাম উঠে আসে। সিবিআইয়ের (CBI) দাবি, জীবনের সঙ্গে মিডলম্যান প্রসন্ন রায়ের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। টাকাপয়সা নিয়ে ডিল চূড়ান্ত হওয়ার পর, চাকরিপ্রার্থীদের তালিকা পৌঁছে যেত প্রসন্নর কাছে। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে এজেন্ট ও মিডলম্যানদের জেরা করে আরও তথ্য জানার চেষ্টা করছে সিবিআই।
জীবন যে মোটেই সুবোধ বালক নন। বলেছেন তাঁর প্রতিবেশী থেকে গৃহশিক্ষক সকলে। প্রথমে জাল প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট বানানো। ওই সার্টিফিকেট দিয়ে অনেকে অবৈধভাবে চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ। পরবর্তীকালে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে শিক্ষকের চাকরি বিক্রি করেছেন বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক। চাঞ্চল্য়কর দাবি করেছেন জীবনের প্রতিবেশী।
পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়, মানিক ভট্টাচার্য, জীবনকৃষ্ণ সাহা এই তিন তৃণমূল বিধায়ক বর্তমানে গারদের পেছনে! কিন্তু, মুখ্য়মন্ত্রী বলছেন ৪জন। বিরোধীরা কটাক্ষের সুরে প্রশ্ন করছে, তাহলে কি তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহা, যাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত শুরু হয়েছে, তাঁকেও আগেভাগে এই তালিকায় ধরে ফেললেন তৃণমূল নেত্রী? আর এরইমধ্য়ে মুর্শিদাবাদের বড়ঞার ধৃত তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বিরুদ্ধে চাঞ্চল্য়কর অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে!
কেউ তাঁকে বেড়ে উঠতে দেখেছেন। কেউ আবার নিজে হাতে বড় করেছেন। শিক্ষক থেকে প্রতিবেশী, বেশিরভাগেরই এক কথা, জীবন মোটেই সুবোধ বালক নন। জীবনকৃষ্ণের প্রতিবেশীর দাবি, তৃণমূল বিধায়কের দুর্নীতির হাতেখড়ি অনেক আগেই। প্রথমে জাল প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট বানানো। সেই সার্টিফিকেট দিয়ে বেআইনিভাবে চাকরি।এই অবৈধ কাজের বিনিময়ে টাকা নিতেন জীবন। পরবর্তীকালে রাজনীতিতে আসার পর দুর্নীতির কলেবরও বাড়তে থাকে।
অভিযোগ, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। প্রাসাদসম বাড়ি। অথচ তাঁর মায়ের দিন কাটে একচিলতে মাটির বাড়িতে। একপাশে ছোট্ট বারান্দা। সেখানেই রান্না করে। মাটির বাড়িতে মেঝেতে শোয়।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা গ্রেফতার হতেই, তাঁর শ্য়ালক নিতাই সাহা যে স্কুলের শিক্ষক, সেই পিয়ারাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিসে বাড়তি একটি তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। যাতে কোনওভাবে কোনও নথি লোপাট হতে না পারে। এদিকে, CBI সূত্রে দাবি, জীবনকৃষ্ণ সাহার ৮টি ব্য়াঙ্ক অ্য়াকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে।
ওই ৮টি অ্য়াকাউন্টে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা ছিল বলে CBI সূত্রে খবর। ৮টির মধ্য়ে ৭টি অ্য়াকাউন্ট মুর্শিদাবাদের। একটি বীরভূমের সিউড়ির। নিয়োগ কেলেঙ্কারির টাকা এই অ্য়াকাউন্টগুলিতে ঢুকেছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে CBI সূত্রে খবর। এদিকে, আর কোথায় কোথায় ছড়িয়ে রয়েছে জীবনের সম্পত্তি, তারও সন্ধান চালাচ্ছে CBI...সূত্রের খবর, জীবনকৃষ্ণ, তাঁর স্ত্রী ও পরিবারের সদস্য়দের নামে কোথায় কোথায়, কত পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে, জানতে রেজিস্ট্রি অফিসেও চিঠি পাঠিয়েছে সিবিআই।