মুর্শিদাবাদ: গঙ্গা ভাঙন নিয়ে ফের কেন্দ্রকে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ভাঙন রোধে টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। ফরাক্কা ব্যারাজ নিয়ে সাহায্য় করেনি কেন্দ্র। ভাঙন মোকাবিলা কেন্দ্রের বিষয়, রাজ্যের বিষয় নয়। ওরা হিংসা, কুৎসা নিয়ে মাথা ঘামায়’। মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের সভায় কেন্দ্রকে নিশানা মুখ্যমন্ত্রীর। 


মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে অব্যাহত ভয়াবহ ভাঙন। একটু একটু করে এগিয়ে আসছে গঙ্গা। গিলে খাচ্ছে জমি বাড়ি। আজ ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী। ভাঙন-দুর্গতদের সঙ্গে কথাও বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জমি হারাদের হাতে পাট্টাও তুলে দেন। এরপর আজই ট্রেনে কলকাতায় ফেরার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। 


এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এটা সেন্ট্রাল সাবজেক্ট, দিল্লির সাবজেক্ট এটা, আমাদের নয়। তা সত্বেও আমরা অনেকবার কথা বলেছি। গঙ্গা ভাঙন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, এগুলো কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা, প্রকল্প।


প্রথমে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে নদী ভাঙন পরিদর্শন, তারপর সভা থেকে কেন্দ্রকে আক্রমণ। এবার নদী ভাঙন ইস্যুতে মোদি সরকারকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে সামশেরগঞ্জে নদী ভাঙন মোকাবিলায় ১০০ কোটি টাকার অনুদানও ঘোষণা করলেন তিনি।


মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেছেন, ওরা আমাদের কোনও সাহায্য তো করেইনি, উপরন্তু ইন্দো-ফারাক্কা,  জল চুক্তি ৭০০ কোটি টাকা রাজ্যের পাওয়ার কথা ছিল, সেই ৭০০ কোটি টাকার এক পয়সাও আমাদের দেওয়া হয়নি। আমাদের পক্ষে, এত কোটি কোটি টাকা জলে ঢালা সম্ভব নয়। টাকাটা নেই আমাদের। তা সত্বেও গতকালও আমি বলেছিলাম সামশেরগঞ্জের জন্য ৫০ কোটি টাকা আমি ঘোষণা করেছিলাম। আজকে আমি ১০০ কোটি টাকা ঘোষণা করলাম। এইটা দিয়ে অন্তত অনেকটা ভাঙনের পার্ট সারানো যাবে। 


নদী ভাঙন ইস্যুতে কেন্দ্রকে নিশানা মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা জবাব দিয়েছে বিজেপিও। মালদা-মুর্শিদাবাদে নদী ভাঙনের বিরাট সমস্যা। বসতবাড়ি থেকে চাষের জমি।


সব চলে যাচ্ছে নদী গর্ভে। এই প্রেক্ষাপটেই ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য, বৃহস্পতিবার মালদার সভায় মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করেন মুখ্যমন্ত্রী শুক্রবার তাঁদের নিয়েই মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে নদী ভাঙন পরিদর্শন করেন তিনি


এরপর সরকারি সভায় ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৮৭টি পরিবারের হাতে জমির পাট্টা তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, সমস্যা বড় গঙ্গার ভাঙন। এটা নীতি আয়োগকেও বলেছি। আমি চিফ সেক্রেটারিকে বলব, ফারাক্কা ব্যারেজ ওরা ড্রেজিং করে না। একদিকে পলি পড়ে যায়, আরেকদিকে জল। একদিকে বাড়ি ভেঙে যায়। একদম নদীর সামনে থেকে। এখন যাঁরা বাড়ি করবেন, দূরে দূরে বাড়ি করবেন। কারণ, কখন যে নদী কতটা ভাঙছে, খুবই বিপজ্জনক। কেউ জানে না, কারও কাছে ডেটা নেই।


গতবছর সামশেরগঞ্জেই নদী ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে পদযাত্রা করেন বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী। কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রীকে সরাসরি ফোন করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। 


কংগ্রেস লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরীর কথায়, আমি আপনার কাছে অনুরোধ করছি, শেখাওয়াতজি আপনি আমাদের জেলা পরিদর্শন করুন, এবং কিছু করুন। এখানের মানুষ খুব কষ্টের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন। 


কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার, দু-পক্ষকে চিঠিও দেন অধীর। এগিন সেই সামশেরগঞ্জে গিয়েই, মুখ্যমন্ত্রী যখন নদী ভাঙন ইস্যুতে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতা-র অভিযোগ তুলছে, তখন পাল্টা সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান অধীর চৌধুরী প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে।


বহরমপুরের লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা ও সাংসদ অধীর চৌধুরী,  আমি পিএসি কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে, কেন্দ্রের জলসম্পদ দফতর, পশ্চিমবঙ্গের সেচ দফতর, সকল অফিসারদের নিয়ে বহরমপুরে, কলকাতায়, দিল্লিতে মিটিং করেছি। একটা নয়, কয়েকটা। সেখানে রাজ্যের যারা আধিকারিক, সেচ দফতরের যারা মাথা, তাদের একবার নয়, হাজারবার বলেছি, আপনারা দিল্লিতে স্কিমটা পাঠান। টাকা পাওয়া যাবে কী যাবে না, সেটা পরের কথা, আগে স্কিমটা পাঠান দিল্লিতে। সেই স্কিম আজও দিল্লিতে পাঠায়নি।


রাজ্য সম্পাদক সিপিএম মহম্মদ সেলিমের কথায়, আমরা দিনের পর দিন আন্দোলন করেছি, আমরা মন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু, ওনার কাছে ভোট ইস্যু। নদী ভাঙন চলছে। তা নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও চলছে। কিন্তু, নদী ভাঙনে সব হারানো মানুষগুলোর সমস্যা মিটবে কবে? কবে নদী ভাঙন প্রতিরোধে একযোগে পদক্ষেপ করতে দেখা যাবে কেন্দ্র ও রাজ্যকে?
সেই প্রশ্ন উঠছে।