রাজীব চৌধুরী, মুর্শিদাবাদ: উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের পর মুর্শিদাবাদের সালার। অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের দাদাগিরিতে ফের রোগী মৃত্যুর অভিযোগ। কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন সালারের বাসিন্দা চাঁদতারা বিবি। গতকাল ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কলকাতায় রেফার করা হলে, পরিচিত অ্যাম্বুল্যান্স চালককে ডাকে রোগিণীর পরিবার। অভিযোগ, বাধা দেন হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা। রোগিণীকে নিয়ে বেরনোর চেষ্টা করলে রাস্তা আটকানোর অভিযোগ। অ্যাম্বুল্যান্সে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ। হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি হওয়ায় রোগিণীর মৃত্যু হয় বলে দাবি করে পরিবার। ৩ অ্যাম্বুল্যান্স চালকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এখনও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ। এর আগে ১৪ মে মর্মান্তিক ছবি ধরা পড়ে কালিয়াগঞ্জে। শববাহী গাড়ি না পেয়ে শিশুর মৃতদেহ ব্যাগে নিয়ে ২০০ কিমি পাড়ি দেন বাবা।


উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের পর মুর্শিদাবাদের সালার। শববাহী গাড়ি চালকের পর এবার অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের দাদাগিরির জেরে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠল। দফায় দফায় অ্যাম্বুল্যান্স আটকানো, ভাঙচুরের পাশাপাশি রোগিণীর পরিবারের সদস্যদের মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় সালার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক।


একজনের সন্তান-শোক। আরেকটি পরিবার মাকে হারিয়েছে। জায়গা আলাদা হলেও, ঘটনাক্রম কার্যত এক। কোথাও শববাহী গাড়ি, কোথাও আবার অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের বিরুদ্ধে দাদাগিরির অভিযোগ। মাঝে মাত্র ২ দিনের ব্যবধান। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের ছবি ফিরল সালার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। 


অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে টানাপোড়েনের জেরে মৃত্যু হল রোগিণীর। পরিবার সূত্রে খবর, কিডনির অসুখে ভুগছিলেন সালারের মাধাইপুরের বাসিন্দা ওই মহিলা। সোমবার ভর্তি করা হয় সালার ব্লক হাসপাতালে। রোগিণীর অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় রাতে কলকাতায় রেফার করা হয়। পরিবারের অভিযোগ,চেনা অ্যাম্বুল্যান্স চালককে ডেকে আনায়, হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়ানো অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা বাধা দেন।


রোগী সমেত অ্যাম্বুল্যান্সকে হাসপাতালেই আধঘণ্টা আটকে রাখা হয়। মৃতের ছেলে শাকিব আলি বলছেন, ৩০ মিনিট পর্যন্ত আটকানো হয়। ঝুট-ঝামেলা করে। অনেক কথা বলে যে, কেন নিয়ে যাবে অন্যজন এসে। আমাদের লাইন আছে। নামাতে দিচ্ছে না। বলে, লাশের পয়সা আমরা ভরে দেব, যদি মারা যায়। আমরা বলছি, হাতে-পায়ে ধরলাম।


এখানেই শেষ নয়। অভিযোগ, এরপর হাসপাতাল থেকে ৩ কিলোমিটার কুলুরি মোড়ে ফের আটকানো হয় অ্যাম্বুল্যান্স। রাস্তায় আড়াআড়ি গাড়ি দাঁড় করিয়ে, গার্ড রেল দিয়ে আটকে রোগিণীর ছেলেদের মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। 


পরিবারের দাবি, এই টানাপোড়েন চলাকালীন অ্যাম্বুল্যান্সেই মৃত্যু হয় রোগিণীর। অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের ‘দাদাগিরি’র জের, রেফার করার ২ ঘণ্টার মধ্যে রোগীর মৃত্যু


সালার থানায় ৩ অ্যাম্বুল্যান্স চালকের নামে অভিযোগ দায়ের করে মৃতের পরিবার। অভিযুক্তরা পলাতক। অন্যদিকে, ঘটনা জানাজানি হতেই তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।


বিরোধীদের নিশানায় তৃণমূল। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, রাজ্যজুড়ে অ্যাম্বুল্যান্স দুর্নীতির জাল...যা ইচ্ছে ভাড়া নিচ্ছে...প্রতিটি হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স সিন্ডিকেট থেকে তৃণমূল কাটমানি খাচ্ছে। 


পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কথায়, এর আগে গত শনিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে মৃত্যু হয় চারমাসের শিশুর। শববাহী গাড়ি চালকের দাবি মতো টাকা দিতে না পারায়, সন্তানের দেহ ব্যাগে পুরে ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন কালিয়াগঞ্জের অসহায় বাবা। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগে এবার সামনে এল সালারের ঘটনা।