রাজীব চৌধুরী, বহরমপুর : বহরমপুরে সুতপা চৌধুরী খুনের ঘটনায় অপরাধী সুশান্ত চৌধুরীকে ফাঁসির সাজা দিল আদালত। বৃহস্পতিবার ফাঁসির সাজা শোনান বহরমপুরের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের অতিরিক্ত ও জেলা দায়রা বিচারক সন্তোষ কুমার পাঠক। খুনের ১৫ মাস পর অপরাধীর সাজা ঘোষণা হল।


বহরমপুরের (Beharampur) গোরাবাজারে (Gorabazar) মেসে’র সামনে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল বহরমপুর গার্লস কলেজের প্রাণীবিদ্যা (Zoology) তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সুতপা চৌধুরীকে। ২০২২ সালের ২ মে সন্ধ্যায় এই খুনের ঘটনায় শিউরে উঠেছিল শহর বহরমপুর। সেই ঘটনার ৭৫ দিনের মাথায় চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ।


২’রা মে, দিনটা ছিল সোমবার। সন্ধেবেলা শহিদ সূর্য সেন রোড দিয়ে মেসে ফিরছিলেন বহরমপুর গার্লস কলেজের (Beharampur Girls College) প্রাণীবিদ্যার তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সুতপা চৌধুরী। সিসিটিভি (CCTV) ক্যামেরায় দেখা যায়, তাঁকে অনুসরণ করছে সুশান্ত চৌধুরী ! মেসের দরজার সামনেই সুতপার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সে। এলোপাথাড়ি কোপানো হয়! 


সুশান্তর বাড়ি মালদার বলরামপুরে। কিন্তু ছোট থেকেই সে থাকত ইংরেজবাজারের এয়ারভিউ কমপ্লেক্সে পিসির বাড়িতে। সুতপার সঙ্গে সুশান্তর পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। একসময় সুতপার বাবার কাছে টিউশনও পড়ত সে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, ৪-৫ বছর আগে সুশান্ত ও সুতপা প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। তবে অচিরেই সেই সম্পর্কে চিড় ধরে।


স্থানীয় সূত্রের দাবি, ২০২১ সালে দুর্গাপুজোর পঞ্চমীর দিন সুশান্ত আর সুতপার মধ্যে ব্যাপক অশান্তি হয়। যার জেরে সুতপার বাড়িতে পর্যন্ত চড়াও হয় সুশান্ত ! যে ঘটনার জল গড়ায় স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছ অবধি ! মৃত ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, এরপরও সুতপার পিছু ছাড়েনি সুশান্ত ! 


খুনের ঘটনা খবর প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়। সেই ঘটনার ৭৫ দিনের মাথায়, বহরমপুর আদালতে (Beharampur Court) হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। অভিযুক্ত সুশান্ত চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৩০২ অর্থাৎ, খুন ও অস্ত্র আইনের ধারায় চার্জশিট দাখিল করা হয়। ঘটনার দিন রাতেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তারপর টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অভিযুক্তকে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করে পুলিশ। সেই ঘটনায়, মুর্শিদাবাদ আদালতে ৩৮৩ পাতার চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। তাতে ৫৪ জন সাক্ষীর বয়ান রয়েছে। অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবি করেন, নিহত কলেজ ছাত্রীর বাবা। 


সুতপা  চৌধুরী খুনে মঙ্গলবার আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয় সুশান্ত  চৌধুরী । এরপর সরকার পক্ষ ও অভিযুক্তের পক্ষের আইনজীবিদের বক্তব্য শোনে আদালত । বৃহস্পতিবার অবশেষে  ফাঁসির সাজা শোনান বহরমপুরের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের অতিরিক্ত ও জেলা দায়রা বিচারক সন্তোষ কুমার পাঠক।