রাজীব চৌধুরী, জলঙ্গি : বাম-কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতি গঠন করলেন তৃণমূল বিধায়কের (TMC MLA) অনুগামীরা ! তা নিয়েই সরগরম মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) জলঙ্গি। দলবিরোধী কাজের অভিযোগে বিধায়ক, ব্লক সভাপতি-সহ ৩ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলেন জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে এসেছে তৃণমূলের কাজিয়া। 


এক জেলা, দুই ছবি। রানিনগর পঞ্চায়েত সমিতি দখল করতে কংগ্রেস ভাঙিয়েছে তৃণমূল। আর তা নিয়েই যখন রাজনৈতিক বাগযুদ্ধ চলছে, ঠিক সেই সময়, জলঙ্গি পঞ্চায়েত সমিতির জেনারেল বডি বা স্থায়ী সমিতি গঠনে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে আঁতাঁতের অভিযোগ উঠল খোদ তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে। তাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে চলে এল তৃণমূলের কাজিয়া !
এই ঘটনা ঘিরে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গেছে মুর্শিদাবাদ জেলায়। পরিস্থিতি এই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, জলঙ্গির তৃণমূল বিধায়ক এবং ব্লক সভাপতিকে একদিনের জন্য সাসপেন্ড পর্যন্ত করেছেন জেলা তৃণমূল সভানেত্রী শাওনি সিংহ রায়।


বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী শাওনি সিংহ রায় বলেন, "দেখুন অন্তর্দ্বন্দ্ব কার সঙ্গে হয় ? তৃণমূলের সঙ্গে তৃণমূলের হয়। অন্তর্দ্বন্দ্ব সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের হয় না। উনি যেটা করছেন, সিপিএম-কংগ্রেসকে আপন করে নিয়েছেন এবং তৃণমূলকে দুর্ব্যবহার করছেন। এটাকে বলা হয়, পেছন থেকে দলকে ছুরি মারা এবং তার জন্যই আমরা চেষ্টা করছি, আগামী দিনে যেন শক্ত ভাবে এই জলঙ্গির বুকে মীরজাফরকে সরিয়ে সিরাজদ্দৌল্লাকে নিয়ে নাচা যায়, সেটা চেষ্টা করছি!"


জলঙ্গি পঞ্চায়েত সমিতির জেনারেল বডিতে মোট আসন সংখ্যা ৪৫। তাঁদের মধ্যে ৭ জন বিভিন্ন কারণে বৃহস্পতিবারের সাধারণ সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। বাকি ৩৮ জন স্থায়ী সমিতি গঠনে অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ২০ জন তৃণমূল বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাকের অনুগামীদের পক্ষে সমর্থন জানান। আর জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রকির পক্ষে ছিলেন বাকি ১৮ জন। বিধায়ক অনুগামীদের সমর্থন জানান, জলঙ্গি পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেসের ৫ এবং সিপিএমের ৩ সদস্য। এই ফলাফল ঘোষণা হতেই তৃণমূলের অন্দরেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শেষপর্যন্ত বৃহস্পতিবার জলঙ্গির তৃণমূল বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাক, জলঙ্গি উত্তর জোনের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বিষ্ণুপদ সরকার এবং জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য গৌতম সরকারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।


জলঙ্গির তৃণমূল বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, "খুব দুর্ভাগ্যজনক। শাওনি সিংহ রায়ই বিরোধ লাগিয়ে রাখছেন। একেবারে নমিনেমশনের সময় মলয় ঘটক বললেন, তার কথা মানলেন না, মোশারফ হোসেন দায়িত্বে আছেন, তাঁর কথাও মানছেন না। দলে উনি স্বেচ্ছাচারিতা চালাচ্ছেন। উনি আমার সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। আমার সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন অনুভব করেননি।"

একাধিকবার চেষ্টা করেও, জলঙ্গি উত্তর জোনের ব্লক তৃণমূলের সভাপতি বিষ্ণুপদ সরকার এবং জেলা পরিষদ সদস্য গৌতম সরকারের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মুর্শিদাবাদ কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, "এটা কোন্দল...কে কোন ক্ষমতায় থাকবে তাই নিয়ে ঝামেলা।"

কিছুদিন আগেও জলঙ্গি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহ সভাপতি নির্বাচনের সময়েও তৃণমূল বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাক তাঁর পুরনো দল সিপিএম এবং কংগ্রেসের সাহায্য নেন বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও তখন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব, বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি।