কলকাতা : বিষধর সাপ কামড়ানো (Venomous Snake Bite) মানেই কি মৃত্যু অবধারিত ? সাপে কাটার পরও কি মানুষ সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব ? সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে রুল অফ হানড্রেড (Rule of Hundred) বাঁচিয়ে তুলতে পারে মানুষের প্রাণ। শরীর থেকে সম্পূর্ণভাবে সাপের বিষের প্রভাব নিরাময় করতে সম্ভব। কি এই রুল অফ হানড্রেড বা একশো সংখ্যার নিয়ম ?  কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্পদংশন বিভাগের পরামর্শদাতা চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার (Dayal Bandhu Majumdar) এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন যে তথ্য।


বাংলার 'সাপ ডাক্তার' এবিপি লাইভের সঙ্গে কথোপকথনে জানিয়েছেন, 'সাপে কামড়ের ১০০ মিনিটের মধ্যে যদি ১০০ মিলি লিটার অ্যান্টিভেনাম রোগীর শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত যে রোগী বেঁচে যাবে।' ১০০ মিলি লিটার অ্যান্টিভেনাম আসলে ১০ টি পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনাম (Polyvalent Antivenum) ডোজ। সাপে কামড়ের ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের মধ্যে স্যালাইনের মধ্যে দিয়ে ১০ টি অ্যান্টিভেনামের ডোজ রোগীর শরীরে প্রয়োগ করতে পারলে তবেই বিষের প্রভাবের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণভাবে লড়াই করার মতো অবস্থায় রোগী থাকবেন বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার। 


রুল অফ হানড্রেড বোঝাতে গিয়েই ডিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার জানিয়েছেন, সাপে কামড়ালে তাই দ্রুত রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছনোর কোনও বিকল্প নেই। সময় যত পেরিয়ে যাবে, তাতে ততই জটিল হয়ে পড়বে পরিস্থিতি। বাংলার সব প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই সাপের বিষের প্রতিরোধী অ্যান্টিভেনাম পাওয়া যায় বলে জানিয়ে তাঁর বক্তব্য, সাপে কামড়ানো প্রথমেই বুঝতে পারলে বাড়তি কোনও ছোটাছুটি করবেন না। আর দ্রুত কাউকে বলে পৌঁছে যেতে হবে কাছের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে (Primary Health Centre)। বাংলার প্রত্যেকর স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই সাপে কাটা রোগীকে সুস্থ করার জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে রাতে রোগী ভর্তি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে নিয়ে গেলেই সাপে কাটার ক্ষেত্রে রোগীর চিকিৎসা হবে। 


ভারতে সব রকমের সাপের কামড়ের জন্যই একটি মাত্র অ্যান্টিভেনাম ব্যবহৃত হয়। যার নাম পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনাম (Polyvalent Antivenum)। তামিলনাড়ুর মহাবলীপূরমের ইরুলা সোসাইটিতে যা তৈরি হয়ে গোটা দেশে পৌঁছে যায়। সাপে কামড়ালে ভয় না পেয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছে গেলেই সম্পূর্ণ চিকিৎসা সম্ভব। 


কেউটে, গোখরো, চন্দ্রবোড়া ও কালাচ (কালাচিতি) এই চার ধরনের বিষধর সাপ পাওয়া যায় বাংলায়। প্রথম দুই ধরনের সাপ ফণা-যুক্ত। কেউটে (Cobra) ও গোখরো এই দুই ধরনের সাপের কামড় মাত্রই শুরু হয়ে যায় ভয়ঙ্কর জ্বালা-যন্ত্রণা। ঘুমের মধ্যে কাউকে কামড়ালে বা নেশাগ্রস্থ কাউকে কামড়ালে ঘুম বা নেশা ছুটে যেতে পারে বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার। আর ফণা-হীন দুই ধরণের বিষধর সাপের মধ্যে চন্দ্রবোড়ার দাঁত খুবই ধারাল, সেক্ষেত্রেও দাগ বা খানিক পর থেকে জ্বালা-পোড়া শুরু হতে পারে। জায়গাটা আস্তে আস্তে ফুলতে শুরু করে। কিন্তু কালাচ বা কালা-চিতি সাপের ক্ষেত্রে তেমনটা হয় না। 'মশার মতো সুক্ষ্ম এমন কামড় হয় যে দাগই পাওয়া যায় না কালাচের কামড়ে', বলেই জানালেন বাংলার সাপ ডাক্তার। কোনও কিছু বোঝা না গেলেও পরের দিকে শুরু হয় নানা সমস্যা। যেমন গাঁটে গাঁটে ব্যথা বা পেটে ব্যথা। 


কেউটে, গোখরো ও কালাচের ক্ষেত্রে সাপের বিষ শরীরে যাওয়ার পর খানিক পর থেকেই তা প্রভাব ফেলে মানুষের স্নানুতন্ত্রে। এই ধরণের বিষধর সাপের বিষকে বলা হয়ে থাকে নিউরোটস্কিক (Neuro Toxic)। যার ফলে সাপে কাটার ক্ষেত্রে রোগীর চোখের পাতা পড়ে আসতে থাকে। চোখ খুলে রাখতে গেলেও প্রচণ্ড সমস্যা হয়। বাংলায় যাকে বলে শিবনেত্র। ইংরেজি প্রতিভাষা টসিস (Tosis)। আর চন্দ্রবোড়ার কামড়ের জেরে বিকল হতে শুরু করে রোগীর কিডনি।



আরও পড়ুন- বিষধর সাপের কামড়ের পর বাঁধন কি দেবেন ? চিরে রক্ত বের করে দেওয়া কি উপকারী ?


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial