রাজীব চৌধুরী, অনির্বাণ বিশ্বাস ও আশাবুল হোসেন, কলকাতা : উস্কে গেল খাগড়াগড়কাণ্ডের স্মৃতি। মুর্শিদাবাদ থেকে ধৃত আনসারুল্লা বাংলাদেশ টিমের জঙ্গি আব্বাস আলির অনুমোদনহীন মাদ্রাসার সঙ্গে যোগ মিলল। বাড়ি ভাড়া নিয়ে রীতিমতো অনুমোদনহীন মাদ্রাসা খুলে ফেলেছিল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই মাদ্রাসার আড়ালে কী হচ্ছিল ? 


অসম, বাংলা ও কেরল। ১৮ ডিসেম্বর এই ৩ রাজ্য থেকে আনসারুল্লা বাংলা টিমের ৮ কুখ্যাত জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে অসম পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার দুই বাসিন্দা আব্বাস আলি এবং মিনারুল শেখ। এবার এই আব্বাসের সঙ্গেই মিলল অনুমোদনহীন মাদ্রাসা-যোগ। যা ইতিমধ্যে উস্কে দিয়েছে খাগড়াগড়কাণ্ডের স্মৃতি।

মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে অনুমোদনহীন মাদ্রাসা খুলে ফেলেছিল আব্বাস। কিন্তু নিজের এই মাদ্রাসা খোলার আগে ২০২৩ সালের মার্চ মাস নাগাদ
হরিহরপাড়ার বারুইপুর অঞ্চলে একটি বেসরকারি মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসাবে যোগ দিয়েছিল আব্বাস। কিন্তু ঠিকঠাক পড়াতে না পাড়ায়, ৬-৭ মাসের মধ্যে তার নামে অভিযোগ করে মাদ্রাসার ছাত্ররা। আর সেটা আঁচ করতে পেরেই পালায় আব্বাস।


হরিহরপাড়ার সলুয়া মাদ্রাসা মহম্মদ মইনুল হক বলেন, 'অ্যাড দেওয়ার পরে উনি এসেছিলেন। কয়েকজন এসেছিল, বেশি আসেনি। তারপর ওকে নির্বাচন করা হয়। মানে (শিক্ষক) হিসেবে। তারপর কয়েকমাস ক্লাস চলার পরে ছাত্রদের অভিযোগ আসল, যেটা আমরা চাইছি, আমাদের মনের মতো হচ্ছে না। আপত্তি হয়েছিল। সেইজন্য আমরা বসেছিলাম। ওনার কানে যায় যে ওনার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে ছাত্রদের।'

এরপর ২০২৪-এর শুরুতে বাড়ির কাছে এই বাড়িটি ভাড়া নেয় আব্বাস আলি। এক বছরের চুক্তি মতো প্রথমেই দিয়ে দেয় ২৫ হাজার টাকা। কোনওরকম অনুমোদন ছাড়াই শুরু করে মাদ্রাসা। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, হরিহরপাড়ার পাশাপাশি মুর্শিদাবাদের অন্যান্য অংশ এমনকী নদিয়ার কিছু অংশ থেকেও প্রায় ৩০-৩৫ জন ছাত্র আব্বাসের মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিল। আব্বাস আলিকে ভাড়া দেওয়া বাড়ির মালিক বলেন, 'মাস ছয়েক আগে নেওয়া। ও (আব্বাস আলি) তো বলল যে বাচ্চা ছেলেপুলে পড়াব। তা বলে নিয়েছিল। দিনে পড়ত। সন্ধেয় চলে যেত।'

২০১৪ সালে বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরেই তো এ রাজ্যে জেএমবি জঙ্গিদের রমরমার কথা সামনে আসে। NIA তদন্তে উঠে আসে কী করে মুর্শিদাবাদের লালগোলার মকিমনগর থেকে ডোমকলের ঘোড়ামারা, বর্ধমানের মঙ্গলকোটের শিমুলিয়ায় একের পর এক বেআইনি মাদ্রাসায় কার্যত জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলে ফেলেছিল সন্ত্রাসবাদীরা। জঙ্গি প্রশিক্ষণ থেকে মগজ ধোলাই পুরোটাই সেখানেই চলত। এবার আনসারুল্লা বাংলা টিমের জঙ্গি আব্বাস আলিও কি অনুমোদনহীন মাদ্রাসা খুলে তেমনই কিছু করতে চাইছিল ?

নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে, অনুমোদনহীন মাদ্রাসাগুলির একাংশ কি অভ্য়ন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে ? কোনও কোনও জঙ্গি ধরা পড়ছে, কিন্তু আরও জঙ্গি কি আমাদের আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে ? এটাই ভয়ের বিষয়।