উজ্জ্বল মুখোপাধ্য়ায় ও আশাবুল হোসেন : সপ্তাহ শুরুতেই ফের একবার তুলকালাম হয়ে গেল বিধানসভায়। চারজন বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ড করেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির সাসপেন্ড হওয়া বিধায়কদের টেনে হিঁচড়ে বের করে দেয় মার্শালরা। ধাক্কাধাক্কিতে কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষীও আহত হওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরই মধ্যে এক আজব কাণ্ড ঘটে গেল সোমবার। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ঘরের সামনে পাওয়া গেল মহিলাদের ৫ জোড়া হাওয়াই চপ্পল। তাও নানারকম রঙের। কেউ যেন ইচ্ছে করেই এই হাওয়াই চটিগুলি রেখে গিয়েছে শুভেন্দুর ঘরের সামনে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। শুরু হয়েছে রাজনীতির আকচাআকচিও।
কে রাখল চটি ?
বিরোধী দলনেতার ঘরের সামনে মহিলাদের ৫ জোড়া হাওয়াই চপ্পল পড়ে থাকতে দেখা যায়। ডেকে পাঠানো হয় বিধানসভার নিরাপত্তারক্ষীদের। কিন্তু কে বা কারা এই হাওয়াই চপ্পল সেখানে রাখল, তা অবশ্য শেষ পর্যন্ত জানা যায়নি। যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
বিধানসভায় ধুন্ধুমার, কী বললেন শুভেন্দু
অন্যদিকে এদিন বিধানসভায় ধুন্ধমার বেঁধে যায়। ঘটনার সূত্রপাত সকাল ১১ টা ২০ নাগাদ। বিধানসভায় একটি 'পয়েন্ট অফ অর্ডার' তোলেন বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ি। গত বৃহস্পতিবার বিজেপি বিধায়কদের বক্তব্য বিধানসভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। জানতে চান, কোন আইনে বিজেপি বিধায়কদের বক্তব্য বাদ দেওয়া হল? তখন পাল্টা চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, নিজেদের বক্তব্য রেখে বেরিয়ে গেলে অধ্যক্ষ যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এটা তাঁর এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে। এরপরই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে দেন বিজেপি বিধায়করা। অধ্যক্ষ বিজেপির বিধায়কদের আসনে বসতে বলেন। তিনি বলেন, আমাকে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবেন না। কিন্তু তারপরও চলতে থাকে বিক্ষোভ। এরপরই মনোজ ওঁরাও, শংকর ঘোষ, দীপক বর্মন ও অগ্নিমিত্রা পালকে চলতি অধিবেশনের জন্য সাসপেন্ড করে দেন স্পিকার। যা শুনে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন বিজেপি বিধায়করা। স্পিকারের নির্দেশে বিজেপি বিধায়কদের বিধানসভা থেকে বের করে নিয়ে যেতে যায় মার্শাল বাহিনী। তখনই বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে ব্যাপক ধস্তাধস্তি শুরু হয় তাঁদের। বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করেন বিজেপি বিধায়করা।
যখন এই ঘটনা ঘটে, তখন বিধানসভায় ছিলেন না শুভেন্দু অধিকারী। খবর পেয়েই বিধানসভায় চলে আসেন তিনি। সোজা চলে যান অধ্যক্ষের টেবিলের সামনে। বলেন, আমাদের বিধায়করা মার খেয়েছেন। তাঁদের চশমা ভেঙেছে। ঘড়ি ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। আপনি কী ব্যবস্থা নেবেন? তখন স্পিকার শুভেন্দু অধিকারীকে বলেন, আপনি জায়গায় গিয়ে বসুন। অনেক মাইক ভাঙা হয়েছে। আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। শুভেন্দু জানান, 'আমি যেহেতু টেবিলে প্রমাণ দিয়ে এসেছি, সুব্রত মৈত্রর ঘড়ি, শান্তনু প্রামাণিক, শঙ্কর ঘোষের ভাঙা চশমা, সেহেতু পাল্টা ডকুমেন্ট তৈরির কাজ চলছে। আমরা জানি এরা কিছু করবে না, আমরা আমাদের প্রতিবাদ রেকর্ড করিয়ে রাখলাম ভবিষ্যতের জন্য। ' এদিন বিধানসভার একাধিক নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে দেখা যায়, ব্যান্ডেজ বাঁধা রয়েছে। অধিকাংশেরই, ব্যান্ডেজ বাঁধা রয়েছে বাঁ হাতে। সব মিলিয়ে সপ্তাহের শুরুর দিনেই বিধানসভা একেবারে তপ্ত।