কলকাতা: 'আমরা গোল্ড মাইনে প্রবেশ করেছি, জানি না কত পরিমাণ গোল্ড রয়েছে। এই গ্রেফতারির পর যে পরিমাণ টাকার হদিশ পাওয়া যাচ্ছে, তাতে আমরা স্তম্ভিত'। দুর্নীতির তদন্তে নেমে এদিন এমনটাই দাবি করলেন ইডির আইনজীবী। ইডির আইনজীবীর দাবি, 'শিক্ষা দফতরের দুর্নীতির তদন্ত করছিলাম, এখন দেখছি রাজ্য সরকারের সব দফতরেই দুর্নীতি। ৬০টি পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি, বেআইনিভাবে ৫০০০ জনের চাকরি। গোটা রাজ্যে সমস্ত দফতরে ছড়িয়ে নিয়োগ দুর্নীতির জাল।
কুন্তলকে গ্রেফতারির পর শান্তনুর নাম পাই, শান্তনুর মোবাইল থেকে অয়নের নাম, দাবি ইডির আইনজীবীর। তাঁর কথায়, 'শান্তনু-কুন্তলের কথোপকথন সামনে আসে, কুন্তল-অয়ন-পার্থর মধ্যে ব্রিজ, শুধু শিক্ষক নয়, শ্রমিক থেকে টাইপিস্ট নিয়োগে দুর্নীতি। মাথা থেকে পা আগাগোড়া দুর্নীতি, তার জন্যই বলছি গোল্ড মাইনে প্রবেশ করেছি। অন্যদিকে ১৪ পাতার অভিযোগ করা হয়েছে, যে কোম্পানির নাম বলা হয়েছে সেটা ভুল', অয়নের আইনজীবীর পাল্টা দাবি 'টেটের ২০১৪ সালের অভিযোগ তোলা হয়েছে'।
কোটি কোটি টাকার লেনদেন: নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে কোটি কোটি টাকার লেনদেন! শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ মাসে মোট ৭ কোটি টাকা ট্রান্সফার হয়েছিল অয়ন শীলের অ্যাকাউন্টে। আদালতে দাবি করল ইডি। কেন্দ্রীয় এজেন্সি সূত্রের আরও দাবি, অয়ন শীলের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ২৫ কোটি টাকা ঢুকেছে! সবমিলিয়ে লেনদেনের অঙ্ক ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার! সেটা কি নিয়োগ দুর্নীতির টাকা?
চাকরিপ্রার্থীদের থেকে তুলেছিলেন প্রায় ২ কোটি টাকা: চাকরি দেওয়ার নামে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চাকরিপ্রার্থীদের থেকে তুলেছিলেন প্রায় ২ কোটি টাকা। সেই টাকা তুলে দিয়েছিলেন অয়ন শীলের হাতে। কিন্তু টাকা দিয়েও চাকরি হয়নি অনেকের। তাঁদের লাঞ্চনা সহ্য় করতে না পেরে, বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হন ব্য়ান্ডেলের দেবানন্দপুরের বাসিন্দা বাবা ও ছেলে। তবে কী মৃত্য়ুর জন্য় দায়ী অয়ন? অন্তত এমনই দাবি করছে মৃতদের পরিবার।
প্রথমে তদন্তে সহযোগিতা করার কথা বললেও, সূত্রের দাবি জিজ্ঞাসাবাদে, তদন্তকে বিপথে চালনার চেষ্টা করেছেন বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়ন শীল। ৩৭ ঘণ্টা পর, তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি।
বর্তমানে চৈত্র মাস চলছে! আর অনেকে বলছেন, আক্ষরিক অর্থেও যেন রাজ্য়ে সরকারি চাকরিরও চৈত্র সেল চলছে! কখনও শিক্ষকের চাকরি বিক্রির অভিযোগ, কখনও গ্রুপ ডি, কখনও গ্রুপ সি, আর এখন তো পুরসভারও চাকরি বিক্রিতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে! সেইসঙ্গে NVF-এর চাকরিও! ED সূত্রে দাবি পুরসভার লেবার পদে চাকরির জন্য রেট ধার্য হয়েছিল ৪ লক্ষ টাকা। ড্রাইভার পদের জন্য ৪ লক্ষ টাকা। এছাড়াও, সাফাই কর্মী - ৪ লক্ষ।
গ্রুপ ডি - ৪ লক্ষ। গ্রুপ সি - ৭ লক্ষ। টাইপিস্ট - ৭ লক্ষ। আর এই আবহেই এবার ইডির হাতে গ্রেফতার হলেন এক প্রোমোটার! প্রায় দেড় দিন.. ৩৭ ঘণ্টার টানটান নাটকের পর অবশেষে ED গ্রেফতার করল বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়ন শীলকে। সূত্রের দাবি, শুক্রবার রাতে CGO-কমপ্লেক্স থেকে ফোন যায় অয়নের কাছে। শনিবার, তাঁকে চুঁচুড়ার ফ্ল্যাটে আসতে বলা হয়। শনিবার, দুপুর আড়াইটে নাগাদ চুঁচুড়ার ফ্ল্যাটে আসেন অয়ন। শুরু হয় জিজ্ঞেসাবাদ। সূত্রের দাবি, প্রথমে নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন অয়ন। চুঁচুড়ার ফ্ল্যাটে যখন অয়নকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তখন শনিবার, দুপুর ৩টে নাগাদ হঠাৎই অয়নের FD ব্লকের অফিসে পৌঁছে যান ED-র তদন্তকারী অফিসার। এর মধ্যেই চুঁচুড়ার ফ্লাট থেকে বেশ কিছু জমি বা সম্পত্তির নথি পান তদন্তকারীরা। অয়ন দাবি করেন, যেহেতু তিনি রিয়েল এস্টেটের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, এগুলো তারই নথি। এতে, সন্দেহ বাড়ে ED-র অফিসারদের। এরইমধ্য়ে FD ব্লকের অফিসে, দেখা যায় ৭টি কম্পিউটার আছে যেগুলো খোলা যাচ্ছে না। পাসওয়ার্ড জানতে চাইলে অয়ন বলেন, মনে নেই।