শিবাশিস মৌলিক, সুনীত হালদার, সুদীপ্ত আচার্য, কলকাতা: নবান্ন অভিযান নিয়ে এবার ভিন্ন সুর রাজ্য বিজেপি-র অন্দরে। 'অরাজনৈতিক' কর্মসূচি বলে উল্লেখ করে, নবান্ন অভিযানে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু নবান্ন অভিযান নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট ভাবে জানালেন না রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। যদিও আন্দোলনকারীদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের অভিযোগ, আর জি কর নিয়ে বিচার লক্ষ্য নয়, আসলে গন্ডগোল পাকাতে চাইছে বিজেপি। (Nabanna Abhijan)


আর জি কর নিয়ে নবান্ন অভিযানে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন শুভেন্দু। তাঁর বক্তব্য, "ছাত্রসমাজ অভিযান ডেকেছে। আমি বলেছি, যদি হয়, নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম পাই, নাগরিক হিসেবে...ওরা তো প্রত্যেক বাড়ি থেকে একজনকে চেয়েছে। আমারও অধিকার আছে আমার বাড়ি থেকে যাওয়ার।" যদিও সুকান্তকে বলতে শোনা যায়, "আমার মনে হয়, অরাজনৈতিক ভাবেই অভিযান হওয়া উচিত। রাজনৈতিক নেতারা দূরে থাকলেই ভাল।" (West Bengal BJP)


আর জি কর-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ চেয়ে মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে 'পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ' নামের একটি সংগঠন। এটিকে 'অরাজনৈতিক' এই কর্মসূচি বলা হচ্ছে, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। সেই অভিযানে অংশগ্রহণ ঘিরে বিজেপি-র অন্দরেও শোনা গেল ভিন্ন সুর।

নবান্ন অভিযানের কর্মসূচিতে যোগ দেবেন বলে বুধবারই জানিয়ে দিয়েছিলেন শুভেন্দু। তাই প্রশ্ন ওঠে, এই নবান্ন অভিযান কর্মসূচির নেপথ্যে কি বিজেপি রয়েছে? যদি না থাকে, তাহলে কি দলগতভাবে বিজেপি এই নবান্ন অভিযানের কর্মসূচিতে যোগ দেবে? শনিবার এ নিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারল না রাজ্য বিজেপি। তবে এই কর্মসূচিকে চিকিৎসা ও আইনগত সহায়তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন সুকান্ত। তাঁর বক্তব্য, "মঙ্গলবার অরাজনৈতিক আন্দোলন হচ্ছে, নবান্ন ঘেরাও হচ্ছে। আমার মনে হয়, সেটা অরাজনৈতিক ভাবেই হওয়া উচিত। রাজনৈতিক নেতাদের দূরে থাকাই ভাল।"

মঙ্গলবারের নবান্ন অভিযান কর্মসূচিতে বিজেপি দলগত ভাবে থাকবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট না জানালেও, 'পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ'-এর এই কর্মসূচিতে যে তাঁর সমর্থন রয়েছে, তা জানিয়েছেন সুকান্ত। যদিও তাদের নবান্ন অভিযান 'অরাজনৈতিক' বলেই দাবি করছে 'পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ'। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি-র পড়ুয়া সায়ন লাহিড়ি বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী ব্যর্থ। তাঁর হাতে পুলিশ এবং স্বাস্থ্য দফতর। আমরা তাঁর পদত্যাগ চাই।" সুকান্তও বলেন, "মানুষ চাইছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় দায় নিয়ে পদ থেকে অব্যাহতি নিন।"

এ নিয়ে বিজেপি-কে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, "যাঁরা ২৭ তারিখ মিছিল ডেকেছেন, তাঁরা বিজেপি-র লোক। ছবি প্রকাশ হয়েছে। উই ওয়ান্ট জাস্টিস নয়, উই ওয়ান্ট গন্ডগোল চাইছে বিজেপি। তদন্ত করছে CBI, যাবে বলছে নবান্ন। মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্ট, ওরা নবান্ন যাবে বলছে।"


এই আবহেই সোশ্যাল মিডিয়ায় চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু। তাঁর দাবি, টুলকিট ব্যবহার করে সমাজমাধ্যমে ভুয়ো খবর ছড়ানোর ষড়যন্ত্র করছে পুলিশ। প্রত্যেক থানায় সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে ভুয়ো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলানো হচ্ছে। সেই ভুয়ো ফেসবুক প্রোফাইল থেকেই আগামী ২৭ অগাস্ট 'নবান্ন ঘেরাও' কর্মসূচি নিয়ে ভুল ও বিভ্রান্তিকর খবর ছড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ ব্যাপারে সুকান্ত বলেন, "শুভেন্দুদা যখন বলছেন, নিশ্চয়ই খবর আছে তাঁর কাছে।"

'নবান্ন চলো' অভিযানের বিরোধিতা করে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হলেও, তাতে কোনও হস্তক্ষেপ করেনি আদালত বৃহস্পতিবার, নবান্ন অভিযান কর্মসূচির প্রসঙ্গ সুপ্রিম কোর্টে তুলেছিলেন রাজ্য সরকারের আইনজীবী কপিল সিব্বল। কিন্তু সেখানেও কোনওপ্রকার হস্তক্ষেপ করতে চায়নি প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।


এই অভিযান নিয়ে কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, "আমার মনে হয় অভিযান হওয়া উচিত। ছাত্র সমাজের আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে। নবান্ন কেন সব জায়গায় যেতে পারে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর আজ পর্যন্ত আলোচনায় বসা দরকার বলে মনে হল না। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে পথে বসিয়েছেন। নিজে বহাল তবিয়তে থেকে যা খুশি করার লাইসেন্স আদায় করেছেন। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হতেই হবে।"

২৭ অগাস্টের নবান্ন অভিযান ঘিরে ইতিমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে পুলিশ। শনিবার হাওড়ার পুলিশ কমিশনার প্রবীণ কুমার ত্রিপাঠীর নেতৃত্বে হাওড়া ময়দান থেকে হেঁটে মল্লিক ফটক পর্যন্ত এদিন এলাকা পরিদর্শন করেন পুলিশের পদস্থ কর্তারা।