কলকাতা: 'বৈঠকের নিটফল শূন্য। রাজ্যের মালকিন যে কথা বলেন, ভৃত্যরা তাই শোনেন। মুখ্যসচিব কোনও সদর্থক জবাব দিতে পারেননি।' বৈঠক থেকে বেরিয়ে এমনটাই বললেন ডিএ আন্দোলনকারীরা। হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে অবশেষে ডিএ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করল রাজ্য সরকার। কিন্তু নবান্নে ডিএ-বৈঠকে কাটল না জট। শুক্রবার নবান্নের তেরো তলায় ডিএ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সংগ্রামী যৌথমঞ্চের ৫ সদস্য, রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির ২ সদস্যরা।


আন্দোলনকারীরা বলছেন, 'সবক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আটকে থাকার কথা বলা হয়েছে। কর্মীদের অধিকার রক্ষার কোনও ইচ্ছা এই সরকারের নেই। আমরা তথ্য দিয়ে বলেছি, রাজ্যের তহবিলের অভাব নেই। ৬ মে কলকাতায় মহামিছিল হবে। চাকরি বিক্রি নিয়ে কী পদক্ষেপ, জবাব দিতে পারেনি রাজ্য। আগামীদিনে লাগাতার ধর্মঘট হবে'। নবান্নে বৈঠকের পর হুঁশিয়ারি যৌথমঞ্চের।


নবান্নে ডিএ-বৈঠক প্রসঙ্গে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন সুকান্ত মজুমদার। 'রাজ্য সরকারের টাকা নেই, ডিএ দিতে পারবে না। আদালত নির্দেশ দিয়েছে বলে আলোচনায় বসেছে। ডিএ দিতে গেলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ হয়ে যাবে'।বিজেপির রাজ্য সভাপতির বিস্ফোরক মন্তব্য করে বলেন,  'মুখ্যমন্ত্রী জানেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিয়ে কোনওরকমে ক্ষমতায় টিকে আছেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের উপর থেকে মানুষের মোহভঙ্গ হলে সরকার পড়ে যাবে'। 


বকেয়া ডিএ নিয়ে নবান্নের বৈঠকে মিলল না সমাধানসূত্র। উল্টে রাজ্য সরকারের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলে, ৬ মে মহামিছিলের ডাক দিল সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। তাদের অভিযোগ, সমাধান খুঁজবার সদিচ্ছাই নেই রাজ্য সরকারের। এই ইস্যুতে পাল্টা সুর চড়িয়েছে তৃণমূলও।


নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে আরেক তৃণমূল বিধায়কের বাড়িতে সিবিআই হানার দিন, শুক্রবার সবার নজর ছিল বকেয়া ডিএ ইস্যুতে নবান্নের বৈঠকের দিকেও। কিন্তু, সেই বৈঠক শেষ পর্যন্ত হল নিষ্ফলা! অধরাই রয়ে গেল সমাধান সূত্র! ফের আন্দোলনের ডাক দিল সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ


শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টে থেকে নবান্নে শুরু হয় ডিএ-বৈঠক। সূত্রের খবর, বৈঠকে আন্দোলনকারীদের বক্তব্য শোনার পরে মুখ্যসচিব বলেন, আমরা সহকর্মীদের প্রতি সহানুভূতিশীল। রাজ্য যে পুরস্কার পেয়েছে, তার মূল কারিগর আপনারাই। তখন আন্দোলনকারীরা প্রশ্ন তোলেন, আমরাই যদি কারিগর হই, তাহলে কেন আমাদের জেলে পাঠানো হচ্ছে? আমাদের দূরের জেলায় হয়রানিমূলক পোস্টিং কেন দেওয়া হচ্ছে? 


অর্থসচিব বলেন, আমরা বিষয়টি দেখব। এর পর বলা হয়, ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ স্কিম, শিক্ষক-সহ সমস্ত স্তরের কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য হওয়া উচিত। অর্থসচিব বলেন, এটা আমরা সুপারিশ করে দিচ্ছি।


বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা ৪২ শতাংশ হারে ডিএ পান। এরাজ্য়ের সরকারি কর্মীরা ডিএ পান ৬ শতাংশ হারে। অর্থাৎ কেন্দ্র এবং রাজ্য়ের মধ্য়ে ডিএ-র ফারাক ৩৬ শতাংশ। সেকথা মনে করিয়েই, মুখ্যসচিবদের উদ্দেশে,আন্দোলনকারীরা বলেন, আপনি তো ৪২ শতাংশ পাচ্ছেন! আর আমরা ৬ শতাংশ!


সূত্রের খবর, মুখ্যসচিব বলেন, আমরাও খারাপ লাগে। কর্মচারীদের প্রতি সহাভূতিশীল। তবে আমাদের তহবিল নেই। অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে দিতে পারছি না। সঙ্কট কাটলে নিশ্চয়ই দেব।


ডিএ আন্দোলনকারীদের দাবি,বকেয়া ডিএ নিয়ে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ নিয়ে যখনই সরকারকে কোনও প্রশ্ন করেছেন, উত্তর এসেছে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা মিলছে না! বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল প্রভাবিত রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের প্রতিনিধিরাও। 


এদিকে, নবান্নের নিষ্ফলা বৈঠকের খবর পৌঁছতেই সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ থেকে ফের স্লোগান উঠতে শুরু করে। জুল ভার্নের কাহিনিতে ৮০ দিনে গোটা বিশ্ব ঘুরে ফেলেছিলেন ফিলিয়াস ফগ! কিন্তু, বকেয়া ডিএ-র দাবি-তে ৮৫ দিন ধরে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আন্দোলন চললেও, এখনও সমাধান সূত্র মেলেনি।