সুজিত মণ্ডল, নদিয়া: ছোটবেলা থেকেই আকাশ ছোঁয়ার ইচ্ছে। নিজে হাতে এমন কিছু বানাতে চেয়েছিলেন আকাশ-যান। কিন্তু বাস্তব তো বড় কঠিন ! তবে ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়, এই প্রবাদকে সত্যি করলেন নদিয়ার ধানতলা থানার দোলুয়াবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা পার্থ মণ্ডল। বয়স তাঁ ২৪ বছর। পেশায় রাজমিস্ত্রি তিনি। দীর্ঘ ৬ বছরের চেষ্টায় এমনই এক অভিনব যান আবিষ্কার করে ফেলেছেন, যা নিয়ে আকাশ ছোঁয়া যাবে। নিজে হাতে করে বানিয়েছেন একটা প্যারাগ্লাইডার! তাঁর এই কীর্তি দেখে তো হতবাক সকলেই। প্রথাগত ভাবে এসব শেখেনি কোনওদিনও, তাহলে এমন কঠিন কাজ কীভাবে সম্ভব করলেন তিনি ? প্রশ্ন সকলের।
৮০ কিলো ওজন বিশিষ্ট, ২২৪ সিসির মোটরবাইকের ইঞ্জিন দিয়ে তৈরি করে ফেলেছেন এক আশ্চর্য-যান। অনেক দিনের চেষ্টার পর সাফল্য এসেছে সম্প্রতি। অভিনব যন্ত্র চালিত যানটি নিয়ে নিজের গ্রামের পথে ও আকাশে চক্কর কেটেওছেন ইচ্ছেমতো। আর স্বপ্নপূরণের আনন্দে মন গিয়েছে ভরে। সংসারের হাল ফেরাতে তাঁকে প্রতিদিন লড়াই করতে হয়েছে, তবু স্বপ্নটা মরতে দেননি। সংসারের চাপ সামলেই টাকা জমিয়েছেন। একটু একটু করে এগিয়েছেন স্বপ্নের দিকে।
এই আশ্চর্য আবিষ্কার দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্যারাগ্লাইডারে বসার জায়গা রয়েছে একজনের। আরও একটি সিট পাশে রাখতে চান আগামীতে। সবাই জিগ্যেস করছেন, কোথায় পেলেন এমন কারিগরি শিক্ষা ? না । প্রথাগত ট্রেনিং ছিল না। কোনও রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া ভিডিও দেখে-দেখে ধীরে ধীরে বানিয়ে ফেলেছেন অভিনব এই প্যারাগ্লাইডার।
দোলুয়াবাড়ি কালীপুর শিক্ষায়তন থেকে ২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর সংসারের হাল ফেরাতে প্রথমে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ শুরু করেন নিজের গ্রামেই। কাজের ফাঁকেও অদম্য ইচ্ছাকে পূরণ করার জন্য ধীরে ধীরে প্যারাগ্লাইডার তৈরির সামগ্রী ক্রয় করতে থাকেন। দু'বছর আগে কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজের জন্য চলে যান। এরপর যখনই বাড়ি ফেরেন তখনই প্যারাগ্লাইডার তৈরীর কাজে হাত লাগান। সমস্ত যন্ত্রাংশ কিনে এই যান তৈরি করতে প্রায় ২ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। পার্থ মণ্ডলের এই কর্মকাণ্ড দেখে তারিফ করছেন সকলেই।
আরও পড়ুন : বাঁকা হাতের আঙুল, মুখও গিয়েছে বেঁকে, মনের জোরকে সঙ্গী করে বাঁ পায়ে মাধ্যমিক দিচ্ছে খেরওয়াল