সুজিত মণ্ডল, নদিয়া: প্রায় দেড় দশক পরে বাড়ল রানাঘাট (Ranaghat) পুর এলাকার সম্পত্তি কর। বাসিন্দাদের অভিযোগ, কোনও কোনও ক্ষেত্রে কর বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ। প্রতিবাদে পুরসভায় দেওয়া হয়েছে স্মারকলিপি। পুরপ্রধান জানিয়েছেন, কর নিয়ে আপত্তি থাকলে পুরসভায় জানানো যাবে। কর বৃদ্ধির ঘটনা ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।


কত বেড়েছে কর:
পুর এলাকায় বার্ষিক কর (Tax) ছিল ২৬০ টাকা, তা ১ হাজার ১৪০টাকা হয়েছে বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, অনৈতিক ভাবে কর বাড়িয়েছে পুরসভা! নাগরিকদের ঘাড়ে আগের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। নদিয়ার রানাঘাট পুরসভার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলে সরব নাগরিকদের একাংশ। রানাঘাটের চৌরঙ্গী মোড়ে প্রতিবাদ সভাও করা হয়েছে।


একাধিক অভিযোগ:
রানাঘাট বৈষ্ণবপাড়া লেনের বাসিন্দা মনোজ ঘোষ বিদ্যুত্‍ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। তাঁর বার্ষিক সম্পত্তি কর ছিল মাত্র ২৬০ টাকা, নতুন কর বিন্যাসে তা হয়েছে ১ হাজার ১৪০টাকা। প্রায় ৫ গুণ কর বাড়ানোই নয়, নতুন কর বিন্যাসে অসামঞ্জস্য রয়েছে বলেও অভিযোগ। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনোজ ঘোষ বলেন, 'আমি আগে বাড়ির যে কর দিতাম, তার থেকে ৫ গুণ বেশি কর চাওয়া হয়েছে। এই বৈষম্যমূলক আচরণের কারণ কী? এরকম আরও বাসিন্দাদের ওপর বাড়তি কর চাপানো হয়েছে। আবেদনে কাজ না হলে পরে আন্দোলনে নামব।' রানাঘাটের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাহানা দাস। একাই থাকেন। বার্ধক্যভাতায় চলে যাবতীয় খরচ। তাঁর বার্ষিক পুরকর ছিল ৫৮ টাকা, এখন হয়েছে ১৭১ টাকা। এই কটা টাকা বাড়লেও তার জন্য অত্যন্ত সমস্যার বলে জানিয়েছেন তিনি। একাধিক বাসিন্দার তরফে এই সমস্যার কথা জানিয়ে কর কমানোর দাবিতে রবিবার রানাঘাট সিটিজেন ফোরামের পক্ষ থেকে পুর চেয়ারম্যানকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। বাড়তি সম্পত্তি কর কমানোর দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। নদিয়ার রানাঘাট সিটিজেন ফোরামের সম্পাদক পরেশনাথ কর্মকার বলেন, 'যা সম্পত্তি কর হওয়া উচিত, অনৈতিকভাবে তার থেকেও বেশি কর সম্প্রতি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে রানাঘাট পুর এলাকায়। করোনাকালের পর কর্মসংস্থানের অভাব তার ওপর অত্যাধিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হয়েছে। এই অবস্থায় অতিরিক্ত কর দেওয়া বাসিন্দাদের কাছে খুবই কষ্টের। আমরা আবেদন করছি এটা কমানো হোক।'


রাজনৈতিক তরজা:
বর্ধিত পুরকর নিয়ে পুরসভাকে নিশানা করেছে বিজেপি (BJP)। নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'রাজ্য সরকার বলছে, মা মাটি সরকারের এত উদারতা। কারও কাছ থেকে অতিরিক্ত কোনও কর নেওয়া যাবে না। এমনকী বাসের ভাড়া থেকে শুরু করে অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোনও রকমভাবে কর বৃদ্ধি করা যাবে না। এটাই যদি তাদের পলিসি হয়ে থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে পুরসভার নাগরিকদের ক্ষেত্রে কেন অতিরিক্ত করের বোঝা চাপানো হচ্ছে?'


পুর-আশ্বাস:
পুরসভা জানিয়েছে, কর নিয়ে কারও আপত্তি থাকলে তা পুরসভায় জানাক বাসিন্দারা। রানাঘাট পুরসভার পুরপ্রধান কোশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, '১৫ বছর পর সম্পত্তিকর বাড়তে চলেছে। আমরা নোটিসগুলো পৌঁছে দিয়েছি। পুরসভার অবস্থাও অনেক জায়গায় ভীষণ খারাপ। কারণ আনুষাঙ্গিক খরচের পাশাপাশি পুর কর্মচারীদের বেতনও বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই পরিমাণে পুরকর কিন্তু চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। তবে অভিযোগ থাকলে জমা দিক। শুনানি হবে। তারপর সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হবে।'


আরও পড়ুন: জন্ম দিয়েই সন্তানকে বিক্রির চেষ্টা মায়ের, হাসপাতালের তৎপরতায় পর্দাফাঁস