রানা দাস, পূর্ব বর্ধমান: কালনা মহকুমা হাসপাতালে উঠল শিশু বিক্রির চেষ্টার অভিযোগ। নথি খতিয়ে দেখতে গিয়ে পর্দাফাঁস হল গোটা ঘটনার। শিশু কিনতে আসা মহিলাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পিছনে শিশু পাচার চক্র জড়িত কি না, খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।


সন্তানের জন্ম দিতে যে হাসপাতালে এসেছিলেন প্রসূতি, অভিযোগ, সেখানেই বিক্রি করতে চেয়েছিলেন সদ্যোজাতকে। কিন্তু হাসপাতালের তৎপরতায় পর্দাফাঁস হল গোটা ঘটনার। শিশুকে কিনতে এসে হাতেনাতে ধরা পড়লেন এক মহিলা।


চাঞ্চল্যকর ঘটনা পূর্ব বর্ধমানের কালনা মহকুমা ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। হাসপাতালে সূত্রে খবর, শনিবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হন এক প্রসূতি। বিকেলে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। 


আরও পড়ুন, চাহিদার জোগান দিতে হিমশিম ব্যবসায়ীরা, করোনা বাড়তেই প্যারাসিটামল কেনার হিড়িক শহরে


হাসপাতালের তরফে কী জানান হচ্ছে? 


হাসপাতালে সূত্রে দাবি, এরপর সদ্যোজাতর নথি তৈরির জন্য বাবার নাম জানতে চাইলে, শিশুর মা যে নাম বলেন তার সঙ্গে পরিচয়পত্রের নামের অমিল পাওয়া যায়। এরপরই আসল ঘটনা সামনে আসে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, মহিলার কাছ থেকে জানা যায়, হাসপাতালে ভর্তির আগেই শিশু বিক্রির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। নিঃসন্তান এক দম্পতিকে নিজের সন্তানকে বিক্রি করবেন বলে ঠিক করেছিলেন মা। এমনকী প্রসূতির শাশুড়ি বলে যে মহিলা এসেছিলেন, তিনি আসলে শিশু কিনতে চাওয়া মহিলার শাশুড়ি। তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।


কালনা মহকুমা ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার অরূপরতন করণ বলেন, "মহিলাটি অন্য পরিচয় দিয়ে এসেছে। আসল পরিচয় জানা গেছে, পুলিশকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে মা ও বাচ্চা হাসপাতালে রয়েছে। উনি নাম পাল্টে অন্য একজনকে দিতে চেয়েছিল।" 


পুলিশ সূত্রে খবর, মেমারির বাসিন্দা প্রসূতির সঙ্গে ১০ বছর আগে উত্তরপ্রদেশের এক ব্যক্তির বিয়ে হয়। তাঁদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। বর্তমানে সন্তানদের নিয়ে বাপের বাড়ি থাকতেন মহিলা। সংসার চালাতে একটি হিমঘরে কাজ নেন তিনি। সেখানেই এক কর্মীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, অন্তঃসত্ত্বা হন মহিলা। অভিযোগ, ওই ব্যক্তি মহিলার গর্ভের সন্তানকে গ্রহণ করতে রাজি ছিলেন না। তাই গর্ভে আসা সন্তানকে বিক্রির পরিকল্পনা করেন প্রসূতি।


অভিযুক্ত প্রসূতি বলেন, "আমার সঙ্গে একজনের কথা হয়েছিল, বলেছিলাম ছেলে-মেয়ে যেই হোক টাকা লাগবে। সে দেবে বলেছিল। আমার আগের তিনটে সন্তান আছে। এই সন্তান চলে আসে, সামাজিক অসুবিধা ছিল। ওষুধ খেয়ে নষ্ট করতে চাইছিলাম। তখন এরা বলে নিয়ে নেব। টাকা দেবে বলেছিল।" 


ঘটনার পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে কি না খতিয়ে দেখছে পুলিশ। কালনার SDPO জানিয়েছেন, গোটা ঘটনার সঙ্গে শিশু পাচারের কোনও চক্র জড়িত আছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।