সুজিত মণ্ডল,নদিয়া: স্কুল চলাকালীন স্কুল কর্তৃপক্ষকে পরীক্ষার সময়সূচি বদলের আবেদন জানাতে গিয়ে শিক্ষকদের মারধর ও শিক্ষক রুমের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুরের অভিযোগ গৃহ শিক্ষক ও অভিভাবকদের একাংশের বিরুদ্ধে। আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন স্কুলের সাতজন শিক্ষক। নদিয়ার গাংনাপুর থানার সরিষাডাঙ্গা ডঃ শ্যামাপ্রসাদ হাই স্কুলের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য। থানায় গৃহ শিক্ষক ও অভিভাবকদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ। অভিযোগ অস্বীকার গৃহ শিক্ষক ও অভিভাবকদের। ঘটনার তদন্তে গাংনাপুর থানার পুলিশ।


নির্দিষ্ট দিনের আগে স্কুলের তৃতীয় ইউনিট টেস্ট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাতে আপত্তি জানান গৃহ শিক্ষক ও অভিভাবকরা। ফলে গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দুপুরে স্কুল চলাকালীন স্কুল কর্তৃপক্ষকে পরীক্ষার সময়সূচি বদলের আবেদন জানাতে গিয়েছিলেন গৃহ শিক্ষক ও অভিভাবকদের একাংশ। তাতেই দুই পক্ষের হাতাহাতি ঘটনা ঘটে। আহত হয়েছেন স্কুলের সাতজন শিক্ষক। ভাঙচুর করা হয় অফিস রুমের চেয়ার, টেবিলও। নদিয়ার গাংনাপুর থানার সরিষাডাঙ্গা ডঃ শ্যামাপ্রসাদ হাই স্কুলের এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল ও ছড়িয়েছে। কার্যত স্কুলের পঠন-পাঠন টিফিনের পর বন্ধ হয়ে যায়। পড়ুয়ার অঘোষিত ছুটির কারণে বাড়ি ফিরে আসেন। পরে স্কুলের পক্ষ থেকে গাংনাপুর থানায় গৃহ শিক্ষক ও অভিভাবক সহ মোট আটজনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা। পুলিস জানিয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 


রানাঘাট-২ ব্লকে আঁইসমালি গ্রাম পঞ্চায়েতে অবস্থিত সরিষাডাঙ্গা ডঃ শ্যামাপ্রসাদ হাই স্কুল। স্কুলের পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বর্তমানে প্রায় ১৬০০ জন পড়ুয়া রয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৫৫ জন। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, ' চতুর্থ পিরিয়ড চলাকালীন কয়েকজন স্থানীয় গৃহ শিক্ষক, অভিভাবকসহ প্রায় কুড়িজনের একটি দল স্কুলে প্রবেশ করে। তারপর তারা প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করতে চান। কিন্তু প্রধান শিক্ষক স্কুলের অনুপস্থিত ছিলেন। তারপরই দ্বিতলের শিক্ষক রুমে ঢুকে শিক্ষক শিক্ষিকাদের উপর চড়াও হয়।'


স্কুলের সংস্কৃত শিক্ষিকা মিতালী বিশ্বাস বলেন, 'এদিন স্থানীয় কয়েকজন গৃহ শিক্ষক ও অভিভাবকসহ বেশ কয়েকজন স্কুলে আসে। তারপর তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলার নাম করে আমাদের উপর চড়াও হয়। কী কারণে তারা স্কুলে এসেছিল, তাও আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। এমনকী স্কুলের সরকারি সম্পত্তিও নষ্ট করা হয়েছে। আমাদেরকে হুমকিও দেওয়া হয়েছে। যে কারণে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় বোধ করছি। এভাবে স্কুলের ভেতরে ঢুকে পড়ুয়াদের সামনে শিক্ষক শিক্ষিকাদের মারধরের ঘটনায় আমরা চরম আতঙ্কে রয়েছি।'


আরও পড়ুন,'জুতো তৈরি'-র হদিশ দিতে গিয়ে দিলীপ-সুকান্তদের নিশানায় সৌগত


যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গৃহশিক্ষক ও অভিভাবকরা। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গৃহশিক্ষক সমীর দত্ত বলেন, 'স্কুলে মারধর বা সরকারি সম্পত্তি নষ্টের কোনও ঘটনা ঘটেনি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আগামী ২৯ আগস্ট থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। অন্যান্য স্কুলের সেটাই হচ্ছে। কিন্তু এই স্কুলের পরীক্ষা এগিয়ে নিয়ে এসে ২৪ আগস্ট থেকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তা নিয়ে এদিন আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েছিলাম। কারণ পরীক্ষা এগিয়ে আসার দরুন ছাত্র-ছাত্রীদের সিলেবাস সময়ের মধ্যে শেষ করাটা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের কথা কোনোভাবেই শুনতে চাইনি, উল্টে ওরা আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন।'


স্কুলের শিক্ষক কৌশিক পালের দাবি, 'পরীক্ষা শেষ হলেই পুজোর কারনে স্কুল ছুটি থাকবে। পরবর্তী তৃতীয় ইউনিট টেস্টের জন্য মাত্র ৩৭ দিন সময় পাওয়া যাবে। ওই সময়ের মধ্যে সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হবে না। যে কারণে আমরা পরীক্ষা এগিয়ে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'