সৌভিক মজুমদার, প্রদ্য়োৎ সরকার ও সন্দীপ সরকার, কলকাতা: একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষকে মন্দিরে ঢুকতে বাধা! শিবের পুজোয় বাধা! এমনই মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে নদিয়ার বৈরামপুরে। জল গড়িয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। চরম বিরক্তি প্রকাশ করে মাননীয় বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, এই সমস্য়া তো বাংলায় আগে ছিল না! কেন উৎসবে যোগ দিতে পারবেন না? পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মাননীয় বিচারপতি।  



'নিচুজাত', 'দলিত', 'অস্পৃশ্য়' জাত-পাতের এই রোগ মূলত গোবলয়ের বিভিন্ন রাজ্য়ে দেখা যেত! কিন্তু হিন্দু-মুসলমানের রাজনীতির মতোই কি জাতপাতের ভেদাভেদ এই বাংলায় এবার পুরোপুরি ঢুকে পড়তে চলেছে? বাঙালির এতদিনের সভ্য়তা-সংসকৃতির কি এভাবেই অবনমন হবে? নদিয়ার বৈরামপুর এলাকার শতাব্দী প্রাচীন শিব মন্দির। সাধারণ মানুষের নিত্য় পুজোপাঠের জায়গা।


অভিযোগ, এখানেই কিনা একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষকে শিব মন্দিরে পুজো দিতে দেওয়া হচ্ছে না! এই অভিযোগ শুনে চরম বিরক্তি প্রকাশ করেন কলকাতা হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। তিনি বলেন, এটা হয় কী করে? একটা মানুষ তাঁর অধিকার পাবেন না? এটা তো বাংলায় ছিল না। এমন সমস্য়া এখনও বাংলায় নেই বলে বিশ্বাস করি। কেন তাঁরা উৎসবে যোগ দিতে পারবেন না? 
 
উল্লেখ্য়, নদিয়ার কালীগঞ্জ থানা এলাকার এই শিব মন্দিরে, তাঁদের প্রবেশের অনুমতি নেই বলে দাবি একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁদের দাবি, তাঁরা তফশিলি জাতি হওয়ায়, পুজোপাঠ থেকে ব্রাত্য় করে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, তিন বছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। মানুষগুলো। নদিয়ার  বৈরামপুরের বাসিন্দা যতন দাস বলেন, আমরা দাস সম্প্রদায়ের মানুষ, সেখানে পুজো দেব, সন্ন্য়াসী হব গাজনে, ওরা হতে দেবে না। মন্দির কমিটির লোক। এই নিয়ে আমরা কৃষ্ণনগরে গেছি, DM-এর কাছে। SP-র কাছেও গেছি। কোনও কার্যকরী হয়নি। তার জন্য় আমরা হাইকোর্ট করেছি।  


 নদিয়ার  বৈরামপুরের বাসিন্দা সন্ন্য়াসী দাস বলেন, সারা গ্রামের সাধারণের ব্য়বহার্য। ওই মন্দিরে আমরা পুজো দিতে গেলে, বা সন্ন্য়াসী হতে গেলে আমাদের বাধা দেয়। উচ্চ পর্যায়ের জাত, তারা আমাদের বলে, তোরা সিডিউলড কাস্ট। মুচি জাত। তোদের এখানে আসা যাবে না। এই বলে আমাদের তাড়িয়ে দেয়। আমার বাবা-ঠাকুরদাদারা তারা দাবি জানিয়ে আসছিল। তারা পায়নি সুরাহা। এখন আমাদের ঘরে ঘরে শিক্ষিত ছেলে হয়ে, তারা বলছে, কোন সমাজে বাস করছি?


 সোমবার এই মামলা হাইকোর্টে ওঠে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে, মাননীয় বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, পুলিশ কী করছে? আবার বলছি, এই সমস্যা বাংলায় ছিল না। তাহলে বলতে বাধ্য হচ্ছি এটা পুলিশের অক্ষমতা। ওসি নয়, কোনও সিনিয়র অফিসারকে দায়িত্ব নিতে হবে। পিছনে যদি অন্য কোনও কারণ থাকেও সেটাও খুঁজে দেখা পুলিশের কাজ। অফিসে বসে বসে রিপোর্ট তৈরি করছে। আবার বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে হবে। স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন'চণ্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই', আর তাঁর বাংলাতেই কি না, আজ জাতপাতে ভেদাভেদ!