উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, বিটন চক্রবর্তী ও তুহিন অধিকারী, কলকাতা: বিচারপতি নিয়োগ ব্যবস্থায় নাক গলাচ্ছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। এই অভিযোগই এবার মোদি সরকারকে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করছে কেন্দ্র। কলেজিয়াম ব্যবস্থায় সরকারের প্রতিনিধিকেও যুক্ত করা উচিত বলে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী। তা নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
কী বলেছেন মমতা:
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম প্রথায় হস্তক্ষেপ করছে কেন্দ্র। আমরা চাই বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ বন্ধ হোক। বিচার সবার জন্য সমান হোক।'
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বিরুদ্ধে পোস্টার দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এজলাসের বাইরে বিক্ষোভ হয়েছে। আঁচ পড়েছে রাজনীতিতেও। এই ঘটনায় বিরোধীরা যখন লাগাতার তৃণমূলকে আক্রমণ করছে। তখনই বিচারপতি নিয়োগের কলেজিয়াম ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপের অভিযোগে, মোদি সরকারকে নিশানা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিতর্ক কোথায়?
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং ৪ প্রবীণ বিচারপতিকে নিয়ে তৈরি হয় কলেজিয়াম। সুপ্রিম কোর্ট এবং অন্যান্য উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে কলেজিয়ামই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেয়। নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাতে হস্তক্ষেপের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়ে টানাপোড়েনের আবহেই সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়কে চিঠি দেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। চিঠিতে বলা হয়, কলেজিয়াম ব্যবস্থায় সরকারের প্রতিনিধিকেও যুক্ত করা উচিত। এই ঘটনার প্রসঙ্গ তুলেই কেন্দ্রীয় সরকারকে বিঁধেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, 'এর পিছনে কোনও মতলব তো অবশ্যই আছে। বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার যদি তার প্রতিনিধি রাখে সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকারও হয়তো প্রতিনিধি রাখার সুযোগ পাবে। কিন্তু হাইকোর্টের তরফে যদি কোনও নাম সুপারিশ করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয় সেক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট সেটা পাঠিয়ে দেবে কেন্দ্রের কাছে। ফলে এটা সরাসরি বিচার ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপ যেটা আমরা কোনভাবেই চাই না।'
সুপ্রিম কোর্টে মোদি সরকারের জাতীয় বিচারপতি নিয়োগ কমিশন গড়ার প্রক্রিয়া ধাক্কা খাওয়ার পরে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়ও প্রশ্ন তুলেছিলেন যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের পাস করানো আইনকে অসাংবিধানিক বলেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এই নজির বিশ্বে আর নেই।
বামেদের অভিযোগ:
এই ইস্যুতে বিজেপি ও তৃণমূলকে এক বন্ধনীতে ফেলে আক্রমণ শানিয়েছে বামেরা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, 'আমরা নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা চাই। বিচার ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপের আমরা তীব্র বিরোধী। আর এই প্রশ্নে বিজেপির সঙ্গে TMC র কোনো পার্থক্য নেই। ওরাও নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে এই রাজ্যেও একই কাজ হয়।'
কলেজিয়াম ব্যবস্থা নিয়ে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর আপত্তিকে গুরুত্ব দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। কলেজিয়াম ব্যবস্থারও কোনও পরিবর্তন হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
আরও পড়ুন: বাবা-মায়ের মৃত্যুর বিচার চেয়ে দীর্ঘদিনের লড়াই দীপঙ্করের, নিয়েছেন আইনের পাঠও