কলকাতা: আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় তোলপাড় গোটা দেশ। সেই নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দু'-দু'টি চিঠি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধর্ষণের মতো অপরাধে কড়া আইন তৈরি এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সংস্থান-সহ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চার্জ গঠন করে ট্রায়াল শুরুর আর্জি জানিয়েছেন। এবার মমতার সেই চিঠির জবাব দিল কেন্দ্রীয় সরকার। (Mamata Banerjee)


মমতার প্রথম চিঠির পর কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবী পাল্টা চিঠি লিখেছিলেন। এবারও মমতাকে ফের দ্বিতীয় চিঠির জবাব দিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, "POCSO আইনে রাজ্যে ৪৮ হাজার ৬০০টি মামলা পড়ে রয়েছে। অতিরিক্ত ১১টি ফাস্টট্র্যাক কোর্ট, যেখানে POCSO ছাড়াও ধর্ষণ মামলার দ্রুত শুনানি হতে পারে, সেগুলিও চালু হয়নি।" অন্নপূর্ণার দাবি, পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে ৮৮টি ফাস্টট্র্যাক কোর্ট চালু করেছে, তা কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় পড়ে না। (RG Kar Case)


মমতাকে লেখা চিঠিতে অন্নপূর্ণা জানিয়েছেন, হাইকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে রাজ্যগুলি যে ফাস্টট্র্যাক কোর্ট চালু করেছে, সেখানে বৃহত্তর ক্ষেত্রে,  প্রবীণ নাগরিক, মহিলা, শিশু, প্রতিবন্ধী, HIV-AIDS মামলা, অন্যান্য গুরুত্র অসুখ সংক্রান্ত মামলা, জমি অধিগ্রহণ, সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদ, জঘন্য অপরাধ সংক্রান্ত মামলার শুনানি হওয়ার কথা। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সেই সংক্রান্ত মোট ৮১ হাজার ১৪১টি মামলা পড়ে রয়েছে। মমতার চিঠি নিয়ে অন্নপূর্ণার বক্তব্য, 'আপনার চিঠিতে যে তথ্য় রয়েছে, তা বাস্তবিকভাবে ভুল। রাজ্যের ফাস্টট্র্যাক কোর্টগুলি চালু করতে যে বিলম্ব হয়েছে, তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা বলেই মনে হচ্ছে'।



ফাস্টট্র্যাক কোর্টগুলিতে স্থায়ীভাবে যে জুডিশিয়াল অফিসার নিয়োগের দাবি তুলেছেন মমতা, তা নিয়ে অন্নপূর্ণা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা অনুযায়ী, একজন জুডিশিয়াল অফিসার এবং সাতজন কর্মী শুধুমাত্র POCSO আইনে দায়ের হওয়া মামলাগুলি নিষ্পত্তির দায়িত্বেই থাকবেন। তাই ফাস্টট্র্যাক কোর্টগুলির অতিরিক্ত দায়িত্ব কোনও জুডিশিয়াল অফিসার বা আদালত কর্মীকে দেওয়া যাবে না। ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর সেকথা আগেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মী না থাকাতে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি চুক্তিভিত্তিক জুডিশিয়াল অফিসার এবং কর্মী নিয়োগ করতে পারে বলে জানানো হয়েছিল আগেই।


ধর্ষণের মামলায় যে কড়া আইন আনার দাবি জানিয়েছেন মমতা, সেই প্রসঙ্গে অন্নপূর্ণা জানিয়েছেন, ধর্ষণ এবং ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় কড়া শাস্তির বিধান রয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতায়। কমপক্ষে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, অপরাধ কতটা গুরুতর, সেই অনুযায়ী যাবজ্জীবন এমনকি মৃত্যুদণ্ডের বিধানও রয়েছে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত এবং ফরেন্সিক পরীক্ষা, এফআইআর দায়েরের দুই মাসের মধ্যে এবং চার্জশিট দায়ের হওয়ার দুই মাসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করার কথা বলা রয়েছে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতায়। মহিলাদের বিরুদ্ধে হিংসা এবং অপরাধ রোখার জন্য যথেষ্ট কড়া বিধান এনেছে কেন্দ্র, রাজ্য সেগুলি মেনে চললে সুফল মিলবে বলেও জানিয়েছেন অন্নপূর্ণা।


আর জি করের ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ২২ অগাস্ট মোদিকে প্রথম চিঠি লেখেন মমতা। এর পাল্টা ২৫ অগাস্ট মমতাকে জবাব দেন অন্নপূর্ণা। তিনি তিনি জানান, বাংলায় ৪৮ হাজারেরও বেশি ধর্ষণ এবং POCSO মামলা ঝুলে রয়েছে। তার পরেও কেন্দ্র অনুমোদিত ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে সেই ধর্ষণ এবং POCSO মামলার শুনানি চালু করার জন্য কোনও সক্রিয় পদক্ষেপও করেনি রাজ্য সরকার। বা রবার বলা সত্ত্বেও মহিলা এবং শিশুদের জন্য হেল্পলাইন নম্বর চালু করেনি রাজ্য সরকার।


শুক্রবার মোদিকে লেখা দ্বিতীয় চিঠিতে সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন মমতা। তিনি জানান, এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে মোদির থেকে কোনও উত্তর আসেনি। কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী যে উত্তর দিয়েছেন, তাতে গুরুতর বিষয়গুলিকে লঘু করে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। মমতা জানিয়েছেন, রাজ্যে নতুন ১০টি POCSO কোর্টের অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য সরকার। এছাড়াও ৮৮টি ফাস্ট ট্র্যাক স্পেশাল কোর্ট এবং ৬২টি POCSO কোর্ট রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ নিজের খরচে চালাচ্ছে। কিন্তু মমতার এই দাবি সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন অন্নপূর্ণা। মঙ্গলবার বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে, ধর্ষণে কড়া শাস্তি সংক্রান্ত বিল আনতে চলেছে রাজ্য সরকার।