কলকাতা: কুয়াশার জন্য নামতে পারেনি হেলিকপ্টার। ফলে নদিয়ার তাহেরপুর থেকে ফিরতে হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে তিনি ভার্চুয়াল বক্তৃতা করতে চলেছেন বলে খবর। কিন্তু তার আগে তুলকালাম বাঁধল সভাস্থলে। ব্যারিকেড ভেঙে এগোলেন বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকরা। এমনকি যে ভিভিআইপি ফটক ছিল, সেটিও ভেঙে ফেলার চেষ্টা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। (Modi's Taherpur Rally)
শনিবার কলকাতা বিমানবন্দর থেকে সোজা তাহেরপুরের নেতাজি পার্কে আয়োজিত সভাস্থলের উদ্দেশে রওনা দেন মোদি। কিন্তু ঘন কুয়াশার জেরে সেখানে নামতেই পারেনি তাঁর হেলিকপ্টার। ফলে কলকাতা বিমানবন্দরে ফিরে আসতে হয় তাঁকে। সেখান থেকেই শেষ পর্যন্ত ভার্চুয়াল বক্তৃতার আয়োজন হয়। কিন্তু ভার্চুয়াল মাধ্যমে মোদির বক্তৃতা শুরু হওয়ার আগে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় নেতাজি পার্কের সভাস্থলে। (Narendra Modi News)
এদিন মোদিকে দেখতে মানুষের ভিড় উপচে পড়েছিল। জায়গার সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেকেই বাইরে রয়ে যান। সেই অবস্থায় ভিতরে ঢোকার জন্য ব্যারিকেড টপকাতে শুরু করেন বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকেরা। সভাস্থলে যে VVIP গেট ছিল, সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একটা সময় পর সেই গেট ভাঙতে উদ্যত হন বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকেরা। ব্যারিকেড ভেঙে ফেলা হয়। সভাস্থলে পুলিশ ও আইপিএস অফিসাররা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খান।
এই চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার মধ্যে VVIP গেটে বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্বের কাউকেই দেখা যায়নি। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর একবার দেখা দিয়েই সরে যান। রাজ্য নেতৃত্ব কর্মীদের বোঝালে, পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হতে পারত বলে অভিযোগ ওঠে। বিজেপি-র এক সমর্থক বলেন, "আমিও দিল্লি থেকে এসেছি। রাজ্য কমিটি যে ব্যবস্থা করেছে...মাঠে যে জায়গায়, তার তুলনায় ভিড় অনেক বেশি। প্রশাসনকে অনুরোধ করব সামলাতে। সকলেই পরিবর্তন চান। মোদিকে দেখতে চান।" গেট ভেঙে ফেলার কথা উঠলে বলেন, "প্রশাসন তো দেখবে!" কিন্তু হাজার হাজার মানুষের ভিড় যেখানে, কেন আগে থেকে ব্যবস্থা করা হল না, ওঠে প্রশ্ন। ওই বিজেপি কর্মী বলেন, "ধারণা নিশ্চয়ই ছিল। তবে যতটা ভেবেছিলাম, তার ডাবল এসেছেন।"
কিন্তু আজ যে পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাতে তিল ধারণার জায়গা ছিল না। পদপিষ্ট হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারত। পুলিশ এবং আইপিএস অফিসাররা বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকদের বোঝানোর চেষ্টা হয়। কিন্তু বার বার ব্যারিকেড ভেঙে ফেলা হয়। আবারও তুলে দাঁড় করাতে হয় পুলিশকে। এক ব্যক্তি বলেন, "গেট কেন আটকাবে? পয়সা খরচ করে এসেছি। আর গেট আটকে রাখবেন? লক্ষ লক্ষ কর্মীদের আটকে রেখেছেন। ভিতরে খালি রয়েছে।" মোদিকে দেখার জন্য এদিন ভোর থেকেও অপেক্ষা করছিলেন অনেকে।
সেই অবস্থায় মঞ্চ থেকে বলা হয়, "দল আমাদের বিজেপি, পরিবার আমাদের বিজেপি। বিজেপি-র সভার শৃঙ্খলাও আমরা বজায় রাখব।" এর পর মঞ্চে ওঠেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, "প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এখানে চপার নামতে পারেনি। তাই আপনারা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ধৈর্যপূর্বক শুনবেন বলে আবেদন করছি।" এর পর ভার্চুয়াল মাধ্যমে অডিও বক্তৃতা শুরু হয় মোদির।
বিশৃঙ্খলা নিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ আজ তীব্র আক্রমণ করেন বিজেপি-কে। তিনি বলেন, "আজ এই বিশৃঙ্খলা...বিজেপি-র কোনও দায়িত্বশীল রাজ্যনেতাকে দেখা যায়নি ভিড় সামলাতে। সরু জায়গায় বেশি লোক ঢুকিয়েছিলেন। সভা এমন কিছু বড় হয়নি। অল্প জায়গায় বেশি মানুষ ঢুকিয়েছেন দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো। বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। বিজেপি-র একজন রাজ্যনেতাকে ভিড় সামলাতে দেখা যায়নি। চেয়ার ছোড়াছুড়ি, গেট ভাঙা, সব রকম বিশৃঙ্খলা হয়েছে। সংযমের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের বিশৃঙ্খলা, অন্যায় আচরণ সামলেছে পুলিশ। নেতারা সব মঞ্চে বসেছিলেন। নরেন্দ্র মোদি মনে রাখবেন, আজ নামতে পারেননি। ২০২৬-এর যাত্রা শুরু করতে এসেছিলেন নাকি? লোকসভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'কুর্সি কি পেটি বাঁধ লিজিয়ে, মৌসম বিগড়নে ওয়ালা হ্যায়'। নরেন্দ্র মোদি, আপনি প্রথম সভায় হোঁচট খেলেন। আপনার কপ্টার যে নামতে পারল না, এটা হল অ্যাক্ট অফ গড। বাংলায় বিজেপি-র জন্য মৌসম বিগড় চুকা হ্যায়। বাংলার বকেয়া টাকা নিয়ে কোনও কথা নেই, বাংলাকে অপমান করেছেন, কোনও কথা নেই, বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের অপমান করেছেন, বাংলাভাষী বলে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন, তা নিয়ে কোনও কথা বললেন না। "