সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: বিধানসভায় জাতীয় সঙ্গীত (National Anthem) অবমাননার অভিযোগের মামলায়, সিঙ্গল বেঞ্চে ধাক্কা খাওয়ার পর,এবার ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হল রাজ্য সরকার। তদন্ত প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগে, ২৮ থেকে ৩০ নভেম্বর, বিধানসভা চত্বরে ধর্না-অবস্থানে বসেছিলেন তৃণমূলের বিধায়ক-মন্ত্রীরা। সামিল হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। একই সময় ৩০-৪০ ফুট দূরে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে পাল্টা বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন বিজেপি বিধায়করা (BJP MLA)। 


একে অন্যকে উদ্দেশ্য করে দিতে থাকে চোর চোর স্লোগান, 'অমিত চোর, মোদি চোর, বিজেপির সবাই চোর।' বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন পাল্টা,' চোর চোর চোর চোর। মমতা চোর মমতা চোর...'এরই মধ্যে তৃণমূলের ধর্নাস্থলে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হলে, বিজেপি তার অবমাননা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে বিজেপি বিধায়কদের বিরুদ্ধে দু'টি FIR-ও দায়ের করে পুলিশ। লালবাজারে তলবও করা হয় ৮ বিজেপি বিধায়ককে।


এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যায় বিজেপি। কিন্তু, গত বৃহস্পতিবার, জাতীয় সঙ্গীত অবমাননা ও অন্যান্য অভিযোগের তদন্তের উপর, ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত।রক্ষাকবচ পেয়েছিলেন ১০জন বিজেপি বিধায়ক। এবার তার বিরুদ্ধেই ডিভিশন বেঞ্চে গেল রাজ্য় সরকার। মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। একদিকে যখন জাতীয় সঙ্গীতকে অবমাননা করার অভিযোগে, বিজেপি বিধায়কদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। জোড়া FIR দায়ের হয়েছিল থানায়। তখন অন্যদিকে বিধানসভা চত্বরে নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহের নাম করে চোর আক্রমণ করা নিয়ে, ৬০ জন তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করে, FIR গ্রহণের দাবি জানায় বিজেপি।


কিন্তু বিজেপির অভিযোগ দায়েরের পরও, হেয়ারস্ট্রিট থানার পুলিশ FIR দায়ের করেনি অভিযোগ। যার প্রেক্ষিতে, চৌঠা ডিসেম্বর বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত রাজ্য সরকারের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেছিলেন, সাধারণ মানুষ কী ভাবছে? কয়েকলক্ষ টাকা খরচ করে মামলা করেছেন। কত ধর্ষণ মামলা, ক্রিমিনাল মামলার শুনানি হচ্ছে না, এই ধরনের একটা ছেলেমানুষি মামলার জন্য!


এরপর সাত তারিখ, বিচারপতি প্রশ্ন তুলেছিলেন, যদি কাছাকাছি দুটি কর্মসূচি হয়, তাহলে একটি কর্মসূচির বিধি কি অন্য কর্মসূচির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে? যদি কোথাও হঠাৎ করে জাতীয় সঙ্গীত শুরু হয়ে যায় এবং তার পাশের বাড়িতে কোনও বয়স্ক লোক শুয়ে থাকেন, তাহলে কি তাঁকে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াতে হবে? দু'পক্ষই স্লোগান দিচ্ছিল। সে সময় তাঁরা কী করবেন? কোথায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হচ্ছিল, খেয়াল রাখবেন? 


আরও পড়ুন, ICCU থেকে কেবিনে ফিরলেন 'কালীঘাটের কাকু' , এবারই কি কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করবে ED ?


বিচারপতি আরও বলেছিলেন, এখানেই প্রশ্ন উঠবে, জাতীয় সঙ্গীত অসৎ উদ্দেশে গাওয়া হয়েছিল কিনা। জাতীয় সঙ্গীত কি দেশকে সম্মান জানানোর জন্য গাওয়া হয়েছিল, নাকি অপর পক্ষকে ফাঁসিয়ে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল? সেদিন পুলিশের ভূমিকা নিয়েও তীব্র ভর্ৎসনা করেছিলেন বিচারপতি।