করুণাময় সিংহ, মালদা: বেগুন পোড়া, বেগুন ভাজা কিংবা বেগুন ভর্তা। শীতকালে হামেশাই পাতে জাঁকিয়ে বসে বেগুন। প্রতিদিন বাজারে গেলে নানা আকারের-নানা দামের বেগুনও চোখে পড়ে। কিন্তু হলফ করে বলা যায়, যত বেগুনই বাড়ির কাছের বাজারে মিলুক। এই বেগুনের খোঁজ পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই। যদি মালদার বাসিন্দা কেউ হন, তার ক্ষেত্রে অবশ্য এই কথাটা খাটবে না। কারণ মালদাতেই চাষ হয় বিশেষ এই বেগুনের।


বেগুনের 'বিশেষত্ব':
আকারে বিশাল। বেগুনের বিচারে দৈত্যাকৃতি বললেও কম বলা হবে না। এক একটি বেগুনের ওজন সর্বোচ্চ ২ কেজি পর্যন্ত হয়। নামটাও সেরকমই- নবাবগঞ্জের বেগুন। মালদায় চাষ হয় এই প্রজাতির বেগুনের। আটশো গ্রাম থেকে শুরু করে ২ কেজি পর্যন্ত ওজন হয় এক-একটি বেগুনের।


মালদার (Malda) পুখুরিয়ার রাজাপুরে মূলত চাষ হয় এই বেগুন (Nawabganj Brinjal)। মালদার মহিষবাথানি, গাজোল ব্লকের পান্ডুয়া এলাকায় কিছু এলাকার জমিতে চাষ হয় নবাবগঞ্জের বেগুন। চাষিরা জানাচ্ছেন, এই প্রজাতির বেগুন আর অন্য কোথাও চাষ হয় না। শুধুমাত্র এই এলাকার কৃষকেরাই চাষ করেন। প্রতিবছর কৃষকেরা বেগুনের (Nababganj Begun) বীজ সংরক্ষণ করে রাখেন। পরের বছর আবার সেই বীজ বপন করেন কৃষকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, এই প্রজাতির বেগুনের বীজ কোথাও কিনতে পাওয়া যায় না। প্রাচীন কাল থেকেই এই বেগুনের চাষ হয়ে আসছে মালদায়। আর সেই বেগুনের বীজ বংশপরম্পরায় চাষ করা হয়ে থাকে বলে জানাচ্ছেন কৃষকরা।


এক সময়  মহানন্দা নদীর তীরে নবাবগঞ্জে বিশাল হাট বসত। কৃষকেরা ওই হাটেই এই বিশাল বেগুন বিক্রি করতেন। হাটের নাম অনুসারেই এই বেগুনের খ্যাতি। তাই এই বেগুনের নাম এখন হয়ে গিয়েছে নবাবগঞ্জের বেগুন। এখন বিশাল আকারের এই বেগুনের দাম ১০০ টাকা কেজি। মালদা শহরের বাজারে পাওয়া যায়। একটি বেগুনের ওজন অনেক তাই ছোট পরিবারে গোটা বেগুন ব্যবহার করা বেশ অসুবিধার। পাশাপাশি দামও অনেকটা বেশি হওয়ায় সবাই কিনতেও চান না।


মালদা জেলার উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদা জেলার তিনটি ব্লকের বেশ কিছু গ্রাম মিলিয়ে প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে এই বেগুন এখন চাষ হচ্ছে। ধীরে ধীরে এই বেগুনের ওজন অনেকটাই কম হচ্ছে। গতানুগতিক চাষের ফলে এমনটা হচ্ছে বলে মনে করছেন তাঁরা। এক একটি বেগুনে বীজ থাকে প্রায় ৫০ গ্রাম। মূলত শীতকালেই পাওয়া যায় এই নবাবগঞ্জের বেগুন।


আরও পড়ুন: আঙুলের ছাপে আর নগদ নয়! প্রতারণা রুখতে বড় পদক্ষেপ