সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: বারাসাতে তৃণমূল কাউন্সিলর আয়োজিত ইলিশ উৎসবে বিশৃঙ্খলা। অভিযোগ, ৫০০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে, খাবার পাননি অনেকে। ঘটনায় ক্ষোভ উগড়ে দিলেন ইলিশপ্রেমীরা। এনিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা।
ইলিশ উৎসবে যোগদানকারীর কথায়, "তুলে খেতে বাধ্য হয়েছি। আমার চোখের প্রবলেম, আমার সুগার, আমার প্রেসার, আমার থাইরয়েড, বেলা ৫ টা বাজে না খেয়ে আমি আর থাকতে পারছি না। প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। আমি খেতে চাই। আমি একটু ভাত আর একটা মাছ নিয়ে খাচ্ছি।" আরেকজনের কথায়, "৫০০ টাকা দিয়ে টিকট কেটে, এভাবে বিরিয়ানি খেতে হচ্ছে। খাবার শেষ সব।"
ডাকবাংলো মোড়ের কাছে, বারাসাত অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে, চেটেপুটে ইলিশ উত্সব। যেখানে, ৫০০ টাকার কুপন কাটলেই, খাওয়া যাবে পেট পুরে ইলিশ। উদ্যোক্তা, স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর। উদ্যোক্তাদের তালিকায় নাম রয়েছে তৃণমূল পরিচালিত বারাসাত পুরসভার চেয়ারম্যান, অশনি মুখোপাধ্যায়েরও। কিন্তু সেই উত্সবেই চরম বিশৃঙ্খলা। অভিযোগ, খাবার পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয় ৩-৪ ঘণ্টা।
টেবিল পেলেও, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় ফাঁকা থালার সামনে। মাছটার নাম ইলিশ। যার স্বাদে-ঘ্রাণে জিভে জল চলে আসে। পকেটের টান উপেক্ষা করতেও সাহসী বাঙালি পিছুপা হয় না। সেই ইলিশের জন্য ৪-৫ ঘণ্টার অপেক্ষা। মাথা পিছু ৫০০ টাকা করে দিয়েও, মেলেনি সাধের মাছ। অভিযোগ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে, অনুষ্ঠানের গেট পর্যন্তই পৌঁছতে পারেননি অনেকে।
আরও পড়ুন, এক ধাক্কায় ১৭.৫ তে নামল পারদ, এর মধ্যেই নিম্নচাপের ভ্রুকুটি
এই অনুষ্ঠানে আসা পিয়ালি সরকার বলেন, "প্রায় ২-৩ ঘণ্টার লাইন দিয়ে ভিতরে এসেছি। একঘণ্টার বেশি বসে। অথচ খাবার পুরো শেষ। টিকিট বিক্রি করেছে, সেই অনুযায়ী তো পরিষেবা দেবে। টাকা ফেরত দিক।" অভিযোগ, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে, হঠাত্ই উধাও হয়ে যান, অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা। অভিযোগ, "৪ ঘণ্ট লাইন দিয়ে ঢুকেছি। ১ ঘণ্টা বসে। বলছে জায়গা নেই। ম্যানেজমেন্টের কেউ নেই। হাওয়া হয়ে গেছে।"
এরইমধ্যে হঠাত্ই দেখা যায়, যোগদানকারীদের একাংশ, নিজেরাই খাবার নিয়ে খেতে শুরু করে দিয়েছেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যায়, যে, অবস্থা সামাল দিতে, ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর। বারাসাত পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সমীর তালুকদার বলেন, "২৩০০ লোক আছে। আমাদের খাবার রেডি হয়ে গেছে। সবাইকে খাওয়াব। কিছু বাড়তি লোক ঢুকে গেছে।"
ইলিশ উত্সবের উদ্যোক্তা ও তৃণমূল কাউন্সিলর সুমিতকুমার সাহা বলেন, "সকলে যাতে গরম খাবার পায়, তাই ধীরে ধীরে রান্না হচ্ছে। ১২ টা থেকে মানুষ। ৪০০ জন খাচ্ছে। ২ হাজার লোক খাবে। খাবার পায়নি অভিযোগ মিথ্যে। ইলিশ তো ১ ঘণ্টা লাগে খেতে।" সূত্রের খবর, প্রায় ২ হাজার ইলিশ প্রেমী কুপন কেটে উত্সবে অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু ইলিশের মধুর আস্বাদনের বদলে অনেককেই ফিরতে হল, বিস্বাদ স্মৃতি নিয়ে।