সমীরণ পাল, উজ্জ্বল মুখোপাধ্য়ায়, দীপক ঘোষ, ব্যারাকপুর ও কলকাতা : অর্জুন সিং ও সোমনাথ শ্যাম দ্বন্দ্বে এবার নতুন মোড়। জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়কের নিশানায় অর্জুন-পুত্র পবন সিং। ভোট পরবর্তী হিংসায় তৃণমূল কর্মীদের গ্রেফতারির প্রসঙ্গ টেনে শানালেন আক্রমণ। বিজেপি-তৃণমূল ২ দিকেই পা দিয়ে রয়েছেন বলে অর্জুন সিংকে নিশানা করলেন সোমনাথ শ্যাম। 


২০২৩ শেষ হয়েছিল ২ জনের সংঘাত দিয়ে। ২০২৪-এর শুরুতেও অব্যাহত শ্যাম-অর্জুন 'দ্বৈরথ'। তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্বের মধ্য়স্থতা-বৈঠকের পরও, এই চাপানউতোর থামার কোনও লক্ষণ নেই ! উল্টে, অর্জুন সিংয়ের পর এবার তাঁর ছেলে পবনকেও
নিশানা করলেন তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম ! জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম বলেন, "২০১৯-এ যিনি বিজেপি সাংসদ হয়েছিলেন তিনি কী করে আমাদের ১৩ জন যুবক ছেলেকে সেই সময় কীভাবে তাঁরা জেলে পোস্ট পোল ভায়োলেন্সে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন, এক জনও কিন্তু তাঁকে ফোটোতে পাননি। সেখানে ভাটপাড়ার বিধায়ক পবন সিং কিন্তু কোর্টে গিয়ে সাক্ষী দিয়ে এসেছিলেন যে তাঁরা নাকি পোস্ট পোল ভায়োলেন্সে ছিলেন। একদিকে ছেলে গিয়ে বলবে যে আমাদের তৃণমূল কংগ্রেসের যারা আছে তাঁরা সেখানে খুন করেছে তাঁদের জেলে ভরে দেবে, আরেক দিকে অন্য কেউ বলবে তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করবে এ কথা আমরা মেনে নিতে পারব না।"


রবিবারও, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে পরপর খুনের ঘটনা নিয়ে অর্জুন সিংকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন সোমনাথ শ্যাম। যদিও তাঁর কথায় আমল দিতে রাজি হননি অর্জুন সিং। তিনি বলেন, "এই ইস্যুতে কে কী বলছে ডোন্ট কেয়ার। আমার তাতে কিছু যায় আসে না।"

কিন্তু, তারপরও সোমনাথ শ্যামের আক্রমণের ঝাঁঝ তো কমেইনি ! বরং আরও বিস্ফোরক দাবি করেছেন তিনি। ভিকি যাদব খুনের তথ্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে দিয়েছি বলে দাবি করেন তিনি বলেন,  "এটাও জানিয়েছি যে গোপাল মজুমদার খুনে যারা জড়িত ছিল শুধুমাত্র তারা ধরা পড়েছে। কিন্তু, এখন পর্যন্ত তার পেছনে যারা মাথা এবং কেন সেই খুন করানো হয়েছিল তা এখনও বেরিয়ে আসেনি।"

ব্য়ারাকপুর শিল্পাঞ্চলের ২ তৃণমূল নেতা, সোমনাথ শ্য়াম ও অর্জুন সিংয়ের সংঘাত মেটানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সুব্রত বক্সীকে। শনিবার যুযুধান ২ নেতাকে নিয়ে বৈঠকে বসার কথা ছিল তাঁর। সেদিন বিকেলে, ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংকে গাড়িতে তুলে, নৈহাটিতে পৌঁছোন সুব্রত বক্সী। কিন্তু, সোমনাথ শ্যাম সেই বৈঠকে আসেনইনি ! এই প্রেক্ষাপটে সুব্রত বক্সীর মধ্য়স্থতা-বৈঠক নিয়ে কার্যত কটাক্ষের সুর শোনা গেছে কুণাল ঘোষের গলায় !

তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, "আমরা তো আশা করেছিলাম, নৈহাটিটাও এতদিনে সর্ট আউট হয়ে যাবে, তিনি কষ্ট করে গেলেন, অথচ মিটিংটাই হল না।"


এনিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি গেরুয়া শিবির। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "বিদায় আসন্ন। এটা সুব্রত বক্সীও জানেন। কুণাল ঘোষ একটু বেশি ভাল করে জানেন। কেউ ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করবেন, কেউ আরেকজনকে মুখ্যমন্ত্রী বানানোর গতিটা ত্বরাণ্বিত করার চেষ্টা করবেন। এটা সম্পূর্ণই ওদের ব্যাপার।"


শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপের পরও, সাংসদ-বিধায়কের প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে লাগাম নেই। এরপর জল কোনদিকে গড়াবে? সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।