সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: বিদ্যাধরী নদীর (Bidyadhari River) বাঁধ কেটে ব্যক্তিগত জমিতে জল ঢুকিয়ে জমানো হচ্ছে পলিমাটি। নদীর সেই পলিমাটি বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায় (soil smuggling)। চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায়। প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করেছেন পঞ্চায়েত প্রধান। পাল্টা সাফাই দিয়েছে ব্লক প্রশাসন।


ব্যক্তিগত জমিতে জল ঢুকিয়ে পলিমাটি জমিয়ে বিক্রির অভিযোগ!


নদী থেকে তাল তাল মাটি তুলে বোঝাই করা হচ্ছে নৌকায়। আর অভিযোগ, এই সব নৌকাই পৌঁছে যাচ্ছে ইটভাটায়। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সেখানে। উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায়, বিদ্যাধরী নদীর বুক থেকে মাটি পাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু চাঁপাতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের গাংনিয়া এলাকায় যে অভিযোগ সামনে আসছে, তাতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তাঁদের অভিযোগ, বিদ্যাধরী নদীর বাঁধ কেটে, খাল তৈরি করে ব্যক্তিগত জমিতে জল ঢোকানো হচ্ছে। জোয়ারের সময় জলের তোড়ে জমিতে ঢুকে আসছে পলিমাটিও। সেই মাটিই পরে চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটাগুলিতে। ফলে একদিকে যেমন নদী নিজের স্বাভাবিক গতি হারাচ্ছে, তেমনই এলাকায় প্লাবন ও শস্যহানির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।  


দেগঙ্গার গাংনিয়ার বাসিন্দা মুজিবর রহমান বলেন, 'জোয়ারের সময় বিদ্যাধরী নদী থেকে মাটি কেটে সরু যে নাসি খাল আছে, সেখানে নৌকা স্টক রাখছে। সময়মতো মাটি নিয়ে ইটভাটায় বিক্রি করছে। নদীর উর্বরতা কমছে।' কিন্তু তাতে কোনও হেলদোল নেই অভিযুক্তের। কথাতেই স্পষ্ট বেপরোয়া মনোভাব। 


অভিযুক্ত মাটি পাচারকারী বৃন্দাবন প্রামাণিকের দাবি, 'যেটা কাটছি নিজেদের সম্পত্তি। কোনও অবজেকশন নেই।' স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও পঞ্চায়েত প্রধান দায় চাপিয়েছেন পুলিশ প্রশাসনের ওপর! 


চাঁপাতলা গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান হুমায়ুন রেজা চৌধুরীর কথায়, 'বিডিও অফিস থেকে বিএলআরও অফিস, থানা, পঞ্চায়েতের তরফে অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। প্রতিদিনই মাটি কেটে চলেছে। প্রতিদিনই দৌরাত্ম্য বাড়ছে।'


প্রশাসনের আবার দাবি লিখিত অভিযোগ কেউ দায়ের করছেন না। দেগঙ্গা ২ নম্বর ব্লকের BLRO পার্থ লোধ বলেন, 'অভিযোগ পেয়ে টিম পাঠিয়েছিলাম। টিম স্পটে কিছু দেখতে পায়নি। মাটি তো চুরি হচ্ছে। সব জায়গাতেই হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে স্পেসিফিক লিখিত অভিযোগ। আর স্পটে গিয়ে কাউকে না পেলে কিছু করা সমস্যা হয়ে যায়। মানুষকেও সচেতন হতে হবে।'


আরও পড়ুন: Panihati By Poll 2022: বুথ চত্ত্বরে সাংবাদিকদের ঢুকতে বাধা, তুলকালাম পানিহাটি ভোট কেন্দ্র


শুরু রাজনৈতিক তরজা


বিজেপি কটাক্ষ, 'চুরিতে পটু তৃণমূল সরকার'। অন্যদিকে তৃণমূলের পাল্টা, 'কটাক্ষ করা ছাড়া কাজ নেই'। 


বারাসাত সাংগঠনিক জেলার বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তরুণকান্তি ঘোষ বলেন, 'দুর্নীতি আর চুরিতে পটু তৃণমূল সরকার। তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যের মদতে বিদ্যাধরী নদী থেকে মাটি চুরি হচ্ছে। এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কয়লা চুরি বালি চুরি মাটি চুরি মিড ডে মিলের চাল চুরি একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। ধিক্কার জানাই।'


তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অরূপ বিশ্বাস বলেন, 'বিজেপির কটাক্ষ ছাড়া কিছু করার নেই। বিগত দিনে যে পঞ্চায়েত ছিল সেখানে প্রধান ছিল বিজেপির। সেখানেও ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। এরা উন্নয়নমূলক কাজ চোখে দেখে না।' 


কবে বন্ধ হবে এই মাটিপাচার? উত্তর নেই কারও কাছে।