রঞ্জিত সাউ, বিধাননগর : ফের সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে কোটি টাকার প্রতারণা খাস কলকাতায়। দিল্লি সরকারের নামে ভুয়ো মেইল আইডি দিয়ে চলছিল প্রতারণা। চিনারপার্কের এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে এই প্রতারণা চক্রের মূল পান্ডাকে গ্রেফতার করল বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ।


পুলিশ সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে, ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর চিনারপার্ক এলাকার বাসিন্দা তরুণ কুমার দাস বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানায় ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তির নামে অভিযোগ করেন। পেশায় নার্সারির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তরুণ। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর মেয়েকে কলকাতার একটি নামী বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ধ্রুব। মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য অভিযুক্তি ধ্রুবকে প্রাথমিকভাবে ২৫ লক্ষ টাকাও দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তরুণ। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, ধ্রুব তাঁর মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতে পারেনি। এরপর অভিযুক্তের কাছ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা ফেরত চান তিনি। সেই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার পরিবর্তে তাঁকে ফের ভাল কাজ পাইয়ে দেওয়া টোপ দেয় অভিযুক্ত। সে বলেছিল, তার সঙ্গে দিল্লি ডেভলপমেন্ট অথরিটির ভাল যোগাযোগ রয়েছে এবং সে সেখানে তরুণের কাজের ব্যবস্থা করে দেবে। তার পরিবর্তে সে আর কোনও টাকাও ফেরত দেবে না।


এমন কাজের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কিছুদিন পরই দিল্লি ডেভলপমেন্ট অথরিটির নামে তরুণের কাছে একটি মেল আসে এবং সেই মেলে ওয়ার্ড অর্ডার পাঠানো হয়। তরুণের অভিযোগ, এরপরই বারবার ওয়ার্ক অর্ডার পাইয়ে দেওয়ার নাম করে তাঁর থেকে ৬ কোটি টাকা নিয়ে নেয় অভিযুক্ত ধ্রুব। এত টাকা যখন চলে যাচ্ছে, তখন টনক নড়ে তরুণের। তিনি সেই ওয়ার্ক অর্ডার নিয়ে দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তাদের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় যে, তাদের মেল আইডি থেকে এমন কোনও মেলই তাঁকে পাঠানো হয়নি। পাশাপাশি তাঁকে কোনও ওয়ার্ক অর্ডারই পাঠায়নি দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। চরম প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে তখনই বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানায় ধ্রুবর নামে অভিযোগ দায়ের করেন তরুণ। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু করে অবশেষে ২০ মাস পর কিনারা করল সাইবার পুলিশ।


সূত্রের খবর, গতকাল কাতে বিধাননগর এলাকা থেকে রাজারহাটের বাসিন্দা অভিযুক্ত ধ্রুবকে গ্রেফতার করে বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। তাঁদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, অভিযুক্ত বহুদিন ধরেই দিল্লি রাজ্য সরকারের সংস্থার নামে ভুয়ো মেল আইডি তৈরি করে প্রতারণা চক্র চালাতো। এভাবেই ভুয়ো ওয়ার্ক অর্ডার পাঠিয়ে বহু মানুষের সঙ্গে কোটি কোটি টাকার প্রতারণা করেছে অভিযুক্ত। সে আর কার কার সঙ্গে এই প্রতারণা করেছে এবং আর কারা কারা তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, তারও তদন্ত চালাচ্ছে বিধাননগর সাইবার থানার পুলিশ।