কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, খড়দহ: ডানলপের রাস্তায় তথাকথিত ভিক্ষুক হিসেবেই সকলে চিনতেন তাঁকে। কিন্তু আচমকাই তাঁর পরিচয় জানা যায়। তিনি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শ্যালিকা। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের (Buddhadeb Bhattacharya) স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্যের আপন বোন। শুধু তাই নয়, খড়দহের প্রিয়নাথ স্কুলের শিক্ষিকাও ছিলেন একসময়। কিন্তু এত বড় পরিচয় থাকার পরও রাস্তায় কেন ঠাঁই হয়েছে ইরা বসুর (Ira Basu)? গত বেশ কিছুদিন ধরে তাঁকে নিয়েই তোলপাড় রাজ্যরাজনীতি। কেন তিনি রাস্তায় থাকেন? সল্টলেকে নিজের বাড়ি থাকতেও কেন ফুটপাথকেই বেছে নিলেন? হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর জানালেন অনেক কথা। জানালেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কাছে নিজের লোক পাঠিয়ে খবর নিয়েছেন। পাশাপাশি তাঁর আটকে থাকা পেনশনও যাতে তিনি দ্রুত পান, সে সম্পর্কেও আশ্বাস দিয়েছেন। 



ডানলপের ফুটপাথের বাসিন্দা ইরা বসুর পরিচয় জানার পরই তাঁকে চিকিৎসার জন্য লুম্বিনি পার্কের মেন্টাল হসপিটালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ফিরে কেন তিনি ফুটপাথে থাকছিলেন সে সম্পর্কে জানান, এটা একেবারেই তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। এবং এর উত্তরও তিনি দিতে চান না বলে জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে যখন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অত্যন্ত ঘনিষ্ট পরিচয় রয়েছে, তিনি যেখানে বুদ্ধদেব বাবুর স্ত্রীর নিজের বোন, তাহলে কেন আজ তিনি এমন পরিস্থিতিতে রয়েছেন? প্রসঙ্গে ইরা দেবী বলেন, 'বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কিংবা মীরা ভট্টাটার্যের সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক, তা মীরা ভট্টাচার্য নিজেই স্টেটমেন্ট দিয়ে জানিয়েছেন। ওটাই শেষ কথা.' পাশাপাশি ফুটপাথে থাকার বিষয়ে কার্যত ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ইরা দেবী। তিনি যে কার্যত বাড়ি ভাড়া না পেয়েই ফুটপাথে থাকছিলেন, তা জানিয়ে বললেন, 'করোনার সময় কেউ বাড়ি ভাড়া দিচ্ছিল না। আর সল্টলেকের বাড়িতে যদি থাকতে পারতাম, তাহলে কেন খামোকা ফুটপাথে থাকতে যাবো? ২০১৪ সাল থেকে সল্টলেকের বাড়িতে থাকি না। খড়দহে তিন বছর বাড়ি ভাড়া করে থেকেছি।'


আরও পড়ুন - Kolkata: ফুটপাতে প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রীর শ্যালিকা! ডানলপে ফুটপাতবাসী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শ্যালিকা ইরা বসু | Bangla News


সল্টলেকের বাড়িতে না থাকতে পারার কারণ হিসেবে ক্ষোভ উগরে দিলেন ইরা দেবী। জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে সল্টলেকের বাড়িতে থাকতে দেওয়া হচ্ছিল না বলে। তাঁর বাড়িতে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এমনকী তাঁকে নানারকমভাবে উত্তক্ত এবং অত্যাচারও করা হত বলে তাঁর অভিযোগ। যদিও তিনি কারও নাম করে অভিযোগ করেননি। কে বা কারা তাঁকে তাঁর সল্টলেকের বাড়িতে থাকতে দেননি, সে সম্পর্কেও কিছু বলেননি। তবে, ওই বাড়িতে থাকার সময়ই তিনি প্রাণনাশের হুমকি পান। এই কথা শোনার পরই তিনি সল্টলেকের বাড়ি ছাড়েন বলে অভিযোগ তোলেন ইরা দেবী। পরবর্তীতে তিনি যে অনেক চেষ্টার পরও কোনও বাড়ি ভাড়া পাননি, সেকথাও জানান।


শিক্ষিকার পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর আজও তাঁর পেনশন আটকে রয়েছে। ইরা দেবী বলেন, 'অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লোক পাঠিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে হাসপাতালের সুপার দেখা করতে দিয়েছিলেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকেরা জানিয়েছেন যে যত দ্রুত সম্ভব পেনশন চালু করে দেওয়ার ব্যবস্থা তাঁরা করবেন।' অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাসে আপ্লুত ইরা দেবী। তাঁর যে পেনশনের অসুবিধা হবে না, সেই আশা করছেন তিনি। যদিও হাসপাতালের সুপার যে তাঁর পরিচিতদের সঙ্গে তাঁকে দেখা করতে দেননি, একথাও বলেন অভিযোগের সুরে।


এত অসুবিধার মধ্যেও কেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সাহায্য নেননি তিনি? ইরা দেবী স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, তাঁর অহং বোধের জন্যই তিনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাননি। পাশাপাশি এটাও জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি কারও কাছে হাত পেতে টাকা চাইবেন না। পরবর্তীতে যদি ফের তাঁকে ফুটপাথে থাকতে হয়, তাহলেও তিনি থাকতে রাজি। কিন্তু কারও কাছে হাত পেতে টাকা তিনি চাইবেন না।