সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: নিয়তিকে গালমন্দ নয়, কঠোর শ্রমে ভরসা। জীবন মানে এটাই, ২৫-৩০ বছর ধরে জেনে এসেছেন লক্ষ্মীরানি গায়েন। এখনও কিছুটি বদলায়নি। স্বামীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অভাবের সংসারের হাল ধরে রাখতে তাই রিকশা করে গ্রামে গ্রামে সবজি বিক্রি করতে বেরিয়ে পড়েন তিনি। হাড়ভাঙা খাটুনি হয়। হোক, কিন্তু হার মানতে নারাজ উত্তর ২৪ পরগনা (North 24 Parganas) বসিরহাটের (Basirhat Woman Inspirational Story) হিঙ্গলগঞ্জের ১৪ নম্বর স্যান্ডেলার বিলের বাসিন্দা। 


লক্ষ্মীরানির পরিবার...
দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে ভরপুর সংসার ৪৫ বছরের লক্ষ্মীরানি গায়েনের। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, সংসারের তিনশো ছাপ্পান্ন রকমের প্রয়োজন, সব মিলিয়ে খরচ নেহাৎ কম নয়। কিন্তু আয়? ভাগ্যকে দোষ দিতে রাজি নন তিনি। তাই স্বামীর পাশাপাশি সংসারে হাল ধরার দায়িত্ব নিয়েছেন। এ জন্য খুব ভোরে উঠে সংসারের কাজকর্ম সারতে হয়। তার পরই রিকশা নিয়ে সবজি বিক্রি করতে বেরিয়ে পড়েন। দিন নেই, রাত নেই, এভাবেই চলছে। লক্ষ্মীরানির উপর ভরসা করে থাকেন স্থানীয়রাও। বলা ভাল, ব্যাগ হাতে তাঁর জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন। আলু, পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কা, ফুলকপি, ওলকপি, সিম, বিট, গাজর, টমেটো-সহ সব রকম সবজি থাকে লক্ষ্মীরানির কাছে। তা ছাড়া মরসুমি সবজি তো রয়েছেই। সবটাই যথেষ্ট টাটকা। স্থানীয়রাও নিশ্চিন্ত। তবে লক্ষ্মীরানির এখন চাপ একটাই। প্রচণ্ড চাপের মধ্যে এখন একটাই আর্জি লক্ষ্মীরানির। পা-চালিত রিকশা করে গ্রামে গ্রামে যাওয়া বেশ কষ্টকর হয়ে উঠছে তাঁর পক্ষে। এখন তাঁর বয়স প্রায় ৪৫ বছর। সরকারি ভাবে তিনি কোনও অনুদান কিছু পাননি। সরকারের কাছে তাই একটাই আর্জি, তাঁকে যদি একটি টোটো গাড়ি বা যন্ত্র চালিত রিকশা দেওয়া সম্ভব হত, তা হলে তার খুবই উপকার হত। পাশাপাশি আরও একটি আবেদন জানিয়েছেন লক্ষ্মীরানি। মাথার উপর একটা ছাদের আবেদন। একটা ঘর হলে সপরিবার সামান্য নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন তিনি। তাঁকে সরকারি অনুদানের আশ্বাস দিয়েছেন হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি।


অনুপ্রেরণার কাহিনি দিকে দিকে...
অভাব-অনটনের সঙ্গে লড়াই ও যুদ্ধজয়ের কাহিনি গ্রামবাংলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে। গত জুলাই মাসে এমনই এক সংগ্রামের কাহিনি শোনা গিয়েছিল মালদায়। অভাবের সংসারে সমস্ত বাধা পেরিয়ে WBCS পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জয়েন্ট বিডিও হওয়ার লক্ষ্য ছুঁয়ে  ফেলার দোরগোড়ায় পৌঁছে যান। মালদার হরিশচন্দ্রপুরের ১ নম্বর ব্লকের তুলসিহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত রাড়িয়াল গ্রামের বাসিন্দা রকি চন্দ্র দাস। বয়স ২৬ বছর। বাবা স্থানীয় হোটেলের সামান্য কর্মচারী। মা অঙ্গনওয়াড়ি স্কুলে সহায়িকা হিসেবে কর্মরত। এক ছেলে, এক মেয়েকে নিয়ে বরাবরই অভাবের সংসার তাঁদের। সেই পরিস্থিতিতেই WBCS পরীক্ষয়ায় উত্তীর্ণ হয়ে মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করেন রকি। 
লড়াই ও জয়ের এমন আরও দৃষ্টান্ত রয়েছে গ্রামবাংলার নানা দিকে। মাঝেমধ্যে শুধু কিছু লড়াইয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হয়। বাকিটা স্থির করে সময়।


আরও পড়ুন:'আমাদের দেখে জড়িয়ে ধরেছিলেন', শ্রমিকদের উদ্ধার করে খুশির হাসি উদ্ধারকারীদের মুখে