সমীরণ পাল, হাড়োয়া : নাম ঘোষণার পরেই হাড়োয়া বিধানসভা উপনির্বাচনের তৃণমূল প্রার্থীর বিরোধিতায় দেখা যায় দলেরই একাংশকে। শাসনজুড়ে পড়ে পোস্টার। একইভাবে, প্রার্থী ঘোষণা হতেই হাড়োয়ায় একাংশ বিজেপি কর্মীও উধাও। বিজেপির একাধিক পার্টি অফিসে পড়ল তালা। এর ফলে তৃণমূল বাড়তি সুবিধা পেল হাড়োয়া উপনির্বাচনে, এমনই দাবি করছেন তৃণমূল ব্লক সভাপতি। ঘটনা ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। রাজনৈতিক মহল বলছে, এই ঘটনায় বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে চলে এল।
হাড়োয়ার উপ-নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী করেছে বিমল দাসকে। বিমল দাস হাড়োয়া মণ্ডলের বিজেপির সভাপতি ছিলেন। তাঁকে প্রার্থী করতেই হাড়োয়া বিধানসভার গোপালপুর, হাড়োয়া ও দেগঙ্গায় বিজেপির একাধিক কার্যালয়ে তালা মেরে উধাও হয়ে গেলেন একাংশ বিজেপি কর্মী।
বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার মহিলা মোর্চার সদস্য অঞ্জলি মজুমদার বলেন, হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্রে দলের একাধিক পার্টি অফিসে তালা পড়েছে। এর কারণ ভারতীয় জনতা পার্টি যাকে প্রার্থী করেছে তাঁর কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই। তিনি নিজের বুথ থেকে জয়লাভ করতে পারেন না। সাংগঠনিক দক্ষতা নেই। জেলার সভাপতি তাপস ঘোষ টাকার বিনিময়ে তাঁকে প্রার্থী করেছেন। ভোট এলে বিজেপির নেতৃত্ব টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলেন। নিজেরা ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স তৈরি করেন। যাঁরা বুথ স্তরে, গ্রাম পঞ্চায়েতের স্তরে রাজনীতি করেন তাঁদের কোনো মতামত না নিয়ে টাকার বিনিময়ে প্রার্থী করা হয়েছে। তাই দলের অধিকাংশ কার্যকর্তা তাঁকে মেনে নিতে পারেননি। বিজেপির পার্টি অফিসে তালা মেরে বাড়িতে বসে আছেন।
এই নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। তৃণমূল কটাক্ষ করেছে। হাড়োয়া বিধানসভার দেগঙ্গা ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি অরূপ বিশ্বাস বলেন, হাড়োয়ায় বিজেপির কোনো অস্তিত্ব নেই। বিজেপি কর্মীরা তাঁকে মানতে পারেননি। এটা ওদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এর ফলে তৃণমূল বাড়তি সুবিধা পাবে।
যদিও হাড়োয়ার বিজেপি প্রার্থী বিমল দাস বলেন, যারা আমার বিরুদ্ধে এই ধরনের অপপ্রচার করছেন তাঁরা তৃণমূলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্র করেছেন। দল তাঁদের চিহ্নিত করে বহিষ্কার করার ব্যবস্থা করছে। বিজেপির কোনো পার্টি অফিসে তালা পড়েনি। আমি আমার জয়ের বিষয়ে ১০০ শতাংশ আশাবাদী।
বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার বিজেপির সভাপতি তাপস ঘোষ বলেন, হাড়োয়া বিধানসভার কোথায় কোথায় দলীয় কার্যালয়ে তালা পড়েছে এটা আমার জানা নেই। যে বা যারা অভিযোগ করছেন তাঁদের আমি চিনি না। আর টাকার বিনিময়ে প্রার্থী করার যেটা অভিযোগ উঠেছে সেটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে পাঁচ জনের নাম পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে বিমল দাসকে প্রার্থী করা হয়েছে। যে সমস্ত অভিযোগ উঠেছে তা ভিত্তিহীন।
বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের একাংশও-
নাম ঘোষণার পরেই হাড়োয়া বিধানসভা উপনির্বাচনের তৃণমূল প্রার্থীর বিরোধিতায় দলেরই একাংশ। শাসনজুড়ে পড়ল পোস্টার। দলীয় প্রার্থী শেখ রবিউল ইসলাম বহিরাগত, হাড়োয়ার প্রার্থী হিসেবে কোনও ভূমিপুত্রকে চাই, দাবি বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীদের একাংশের। লোকসভা ভোটে বসিরহাট কেন্দ্রে জয়ী হন হাড়োয়ার বিধায়ক শেখ হাজি নুরুল ইসলাম। সম্প্রতি তাঁর মৃত্যু হয়। হাড়োয়া বিধানসভা আসনে তাই উপনির্বাচন হচ্ছে। তৃণমূল প্রার্থী করেছে প্রয়াত সাংসদের ছেলে শেখ রবিউল ইসলামকে। গতকাল প্রার্থী তালিকা ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শাসনে প্রার্থীর বিরোধিতায় পোস্টার পড়ে। নাম ঘোষণার আগেও এধরনের পোস্টার দেখা গিয়েছিল। পোস্টারের নেপথ্যে কি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব? মানতে নারাজ হাড়োয়ার তৃণমূল প্রার্থী।