সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Paraganas) ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের অন্যতম বনেদি বাড়ির পুজো হল ইছাপুরের (Ichhapur) ভট্টাচার্য বাড়ির পুজো l মহালয়ার (Mahalaya) আগেরদিন বাপের বাড়ি আসেন উমা। মহালয়া কাটে পরিবারের সঙ্গে। পরেরদিন হয় চণ্ডীপাঠ। পুজোও শুরু সেদিন থেকেই।


ইছাপুরের ভট্টাচার্য বাড়ির পুজো


দুশো পঁচাত্তর বছর পুরনো ঐতিহ্যের পুজো ইছাপুরের নবাবগঞ্জের ভট্টাচার্য পরিবারের। ওপারে হুগলির চন্দননগর, এপারে উত্তর চব্বিশ পরগনার ইছাপুর নবাবগঞ্জ। ওপারে ঐতিহ্যের আলো, এপারে ঐতিহ্যের সাত পুরুষের পুজো।


জমিদারি দম্ভে নয়, টোল পণ্ডিতের মধ্যবিত্ত আবেগে আজও পুজো হচ্ছে উত্তর চব্বিশ পরগনার নবাবগঞ্জের ভট্টাচার্য পরিবারে। দলিল বলছে, পুজোর বয়স দুশো সত্তর। গঙ্গার তীরে নবাবগঞ্জের ভট্টাচার্য পরিবারে পুজো শুরু করেন রামচন্দ্র তর্কালঙ্কার। ১৭৪৭ সালে। মেদিনীপুর থেকে টোল খুলতে নবাবগঞ্জে আসেন পণ্ডিতমশাই। নতুন জায়গায় ধীরে ধীরে জমে ওঠে টোল। একদিকে টোলের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে, অন্যদিকে শিক্ষক হিসেবে প্রভাব বাড়তে থাকে তর্কালঙ্কারের। হয়তো এই সময়েই তাঁদের জমিতে দুর্গাপুজার প্রস্তাব দেন ভট্টাচার্যরা। অস্থায়ী হোগলা ঘরে হয় প্রথম পুজো। রামচন্দ্র তর্কালঙ্কারের কথা আজ আর কেউ বলে না। কিন্তু তাঁর উমা আজও মেয়ে রূপে পুজিত হন ভট্টাচার্য দালানে।


আরও পড়ুন: Durga Puja Weather: পুজোর আনন্দে 'অসুর' বৃষ্টি, ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় ভিজল কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ


প্রথমে হোগলা পাতার ঘর। পরে তা পাকা হয়। মজবুত হয় ভিত। এরপর ভালোয় মন্দে ভট্টাচার্যদের ১৩ প্রজন্ম কেটে গেছে। মহালয়ার আগের দিন ঘরে আসে মেয়ে। দালানে মহালয়া কাটে পরিবারের সঙ্গে। তারপর শুরু হয় চণ্ডীপাঠ। সোনার গয়নায় সেজে ওঠে উমা। অন্নভোগে শুরু হয়ে যায় পুজো। সপ্তমী থেকে নবমী রয়েছে পাঁঠা বলি প্রথা। দশমীতে ফল বলি। তবে এখনও ভট্টাচার্যদের প্রতিমা বিসর্জনের পরই এলাকার অন্য প্রতিমা নিরঞ্জনের নিয়ম। হাল নেহাতই বেহাল। বাড়ির গায়ে জমা শ্যাওলায় যেন অবিরাম রক্তক্ষরণ, নীরবে। কে জানে আর কতদিন? তবু হাল ছাড়তে নারাজ ভট্টাচার্যরা। পুজো চালাতে লিজ নেওয়া হয়েছে তিনটি পুকুর, এবারও চোখের জল লুকিয়ে দিলদরিয়া নবাবগঞ্জের ভট্টাচার্যরা।


অন্যদিকে পুজোর শুরুতেই অসুর রূপে দেখা দিল বৃষ্টি! ষষ্ঠীর সন্ধেয় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হল কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায়। জল জমে গেল সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ-সহ বিভিন্ন রাস্তায়। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে উপকূলবর্তী এলাকা ও পশ্চিমের জেলাগুলিতে। জানাল আলিপুর আবহাওয়া দফতর।