সমীরণ পাল, বসিরহাট: বাংলার একাধিক ক্ষুদ্র শিল্প অর্থের অভাবে পট বদলিয়েছে। কখনও একটা একটা ব্র্যান্ডিং পেয়ে শিখরে উঠেছে। কোনও আবার মিশে গিয়েছে মাটিতে। আর এবার লভ্যাংশের অভাবে প্রেক্ষাপট বদলাল গোবিন্দপুরের কারিগর পাড়ার 'আড়ি' শিল্পীদের (North 24 Parganas Handicrafts Extinct )। 


একসময় উৎসবের মরশুমে দম ফেলার সময় থাকত না 'আড়ি' শিল্পীদের


এক সময়ে নানা রঙের কাপড়ে উজ্জ্বল সুতো দিয়ে নকশা করার কাজে ব্যস্ত থাকতেন উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের খোলাপোতা পঞ্চায়েতের গোবিন্দপুর গ্রামের কারিগর পাড়ার মহিলা শিল্পীরা। তারা সেলাইয়ের সূচ দিয়ে সুতোর সঙ্গে গলিয়ে নিতেন ছোট্ট মুচকি, সুদৃশ্য পাথর, নকশা করা রাংতার পাতা। গ্রামে 'আড়ি' নামেই চলতি কথা এই সেলাই শিল্প। অনেকেই আবার এটিকে জরির সেলাই ও বলেন থাকেন। বসিরহাট থানার খোলাপোতার গোবিন্দপুর গ্রামের কারিগর পাড়ায় প্রায় ৩০০ পরিবারের মহিলারা নিজেরা স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষে তাঁরা 'আড়ি' সেলাইয়ের কাজকে বেছে নিয়েছিলেন। তবে বছর দশক আগে কারিগর পাড়ায় যখন প্রথম আড়ি সেলাই শুরু হয় তখন সংখ্যাটা অনেক কম ছিল। দুর্গাপুজো, ঈদ, প্রভৃতি উৎসবের মরশুমে দম ফেলার সময় থাকত না নকশাকারীদের।


 প্রযুক্তির জের, চিন্তা বাড়িয়েছে কারিগর পাড়ার আড়ি শিল্পীদের


 এক একটি শাড়ির নকশার কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য মহিলাদের সঙ্গে হাত মেলাতে থাকেন পাড়াপড়শি ও আত্মীয়স্বজনেরা। এভাবেই বাড়তে থাকে 'আড়ির' নকশাশিল্পীর সংখ্যা । বর্তমানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কম্পিউটার চিন্তা বাড়িয়েছে কারিগর পাড়ার আড়ি শিল্পীদের ।কাজের সুযোগ সুবিধা কমছে । ৩০০ ঘর থেকে এখন এসে দাঁড়িয়েছে দুই একটি ঘরে। আগের মতো এখন অর্ডার পান না কলকাতার বড়বাজার থেকে কারিগর পাড়ার মহিলা শিল্পীরা। কেন না কম্পিউটারে খুব অল্প সময়ের মধ্যে একজন অনেক শাড়ির ডিজাইন করে দিতে সক্ষম। আর তাতেই বেশি লাভবান হন শাড়ি বিক্রেতারা ।একজন নকশা করার যা মজুরি তার থেকে অনেক কমে কম্পিউটার শাড়ি নকশাকারীর কাছ থেকে  পেয়ে যাচ্ছেন মালিকেরা। আর এই আড়ি সেলাইয়ের কাজে মহিলাদের সাহায্যে করে স্কুল পড়ুয়ারা।


বিলুপ্তির পথে আড়ি সেলাইয়ের কাজ


একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী নাজমা খাতুন জানিয়েছেন, পড়াশোনার ফাঁকে মায়ের সঙ্গে নকশা তুলি সেলাইও করি। এখন কাজ অনেক কমে গিয়েছে। সেইরকম লাভবান নেই । আমাদের পড়াশোনার খরচ ওঠে না।কারিগর পাড়ার মহিলা শিল্পী হাবিজাবির বিবি জানিয়েছেন, আগে যে আমরা ৮০০ টাকা লাভ পেতাম এখন সেই কাজে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পাচ্ছি। এইভাবে লাভের মুখ না দেখায় অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেও অনেক মহিলা শিল্পীরা এখনও ধৈর্য্য ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন সেলাই। এই আড়ি শিল্প নিয়ে খোলাপোতা পঞ্চায়েতে প্রধান অপরেশ মুখোপাধ্যায় তিনি জানান যে, এক সময় এই আড়ি সেলাইয়ের কাজ কারিগর পাড়ার ঐতিহ্যছিল সেটা আস্তে আস্তে বিলুপ্তির পথে। আমার কাছে যদি কোনও শিল্পী এগিয়ে আসে, আমি তাহলে তাদেরকে অবশ্যই সাহায্যে করব।'


আরও পড়ুন, '..মুখ্যমন্ত্রী নাচছেন', গিরিরাজের পর বিস্ফোরক শুভেন্দু, বললেন..


বর্তমানে বাধ্য হয়ে পেশা বদলেছেন 'আড়ি' শিল্পীরা 


মূলত গত দশ বছরে একটু একটু করে কমেছে 'আড়ি' শিল্পীদের সংখ্য়া।  লাভের মুখ না দেখায় বাধ্য হয়ে পেশা বদলেছেন 'আড়ি' শিল্পীরা। অনেকেই এখন ধীরে ধীরে চাষের কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। অনেকেই আবার পাড়ি দিয়েছেন ভিন রাজ্যে। মূলত পরিবারের দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে 'আড়ি'-র কাজে এখন আর নির্ভর করা সম্ভব হচ্ছে না বসিরহাটের এই শিল্পীদের।