সন্দীপ সরকার, দত্তপুকুর: ঘটনাস্থল জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিন্নভিন্ন দেহ, অন্য দিকে পড়ে রয়েছে বাজি তৈরির মশলা (Firecracker Factory Incident)। সেই মশলা যা দিয়ে বেআইনি বাজি তৈরির কারবার চলত দত্তপুকুরের কারখানায় (Duttapukur Incident), অভিযোগ স্থানীয়দের। এদিন সকালের ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর সেই এলাকা এখন 'খন্ডহর'। ইট, চুন, সুরকির গাঁথনি বেরিয়ে পড়েছে। ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। পুলিশ-প্রশাসনের আশঙ্কা, ধ্বংসস্তূপের নিচে কেউ কেউ আটকে থাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে কোথায় পৌঁছবে নিহতের সংখ্যা? ছুঁয়ে ফেলবে এগরার ঘটনাকে? আশঙ্কার আবহে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় বচসায় জড়িয়ে পড়েন স্থানীয়রা।


কেন বচসা?
স্থানীয়দের বক্তব্য, সময় থাকতে বহুবার বেআইনি বাজি কারখানার ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি। বাসিন্দাদের বড় অংশের অভিযোগ, বেআইনি বাজির আড়ালে সেখানে বোমা তৈরির কাজ চলত। সেরকমই একটি কারখানায় তীব্র বিস্ফোরণ ঘটে রবিবার সকালে। বিস্ফোরণের জেরে ধূলিসাৎ দোতলা বাড়ি। লাগোয়া একাধিক বাড়ি বিপজ্জনকভাবে  ক্ষতিগ্রস্ত। ধ্বংসস্তূপ সরাতে দ্রুত পৌঁছে যায় পে-লোডার। কাজও শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। কিন্তু বাসিন্দাদের মেজাজ থেকে স্পষ্ট, বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও এই তৎপরতা অতীতে দেখায়নি প্রশাসন। এদিনের ঘটনার পর তাই পুলিশের সঙ্গে বার বার বচসায় জড়িয়ে পড়েন স্থানীয়রা। আপাতত জেসিবি মেশিন দিয়ে দ্রুত ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ চলছে।    


আর কী?
যেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে, তার ঠিক পিছনেই দেখা যায়, বারুদ-সহ বাজি তৈরির মশলা মজুত করা রয়েছে। স্থানীয়দের বক্তব্য, ওই জায়গাটি ভাড়া দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা পেত সামসুল আলি ওরফে খুদে। মূলত ছোট মাপের বোম তৈরি করা হত সেখানে, এমনই জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। তার পর সেই বোম নিয়ে গিয়ে সামসুলের বাড়ির ছাদের উপর শুকনো হত, যা নিজের বাড়িতেই মজুত রাখত সে। এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত সামসুলের এই কাজকর্ম অজানা ছিল না স্থানীয়দের,সেটা স্পষ্ট। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনের মদতেই চলত এই বেআইনি বাজির কারবার। এমনকী খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ সব জানতেন, দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। ঘটনা হল, গত ১৬ মে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের জেরে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সাক্ষী থেকেছিল পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা। সে বার ভানু বাগ নামে এক ব্যক্তির বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গুরুতর জখম হয়েছিলেন ভানু বাগও। শরীরের ৮০% পুড়ে গিয়েছিল। তবে বিস্ফোরণের পর বাইকে চেপে এলাকা থেকে পালান ভানু। ছেলে-ভাইপোর সঙ্গে বাইকে চেপে পালান তিনি। ঝলসে যাওয়া অবস্থাতেই এলাকা ছেড়ে ওড়িশায় রওনা দিয়েছিলেন বেআইনি বাজি কারখানার মালিক, দাবি ছিল পুলিশের। বাইকে করে প্রথমে বালেশ্বর যান ভানু, ভর্তি করা হয় এফএমএমসিএইচ হাসপাতালে। সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, অনুষ্ঠান বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে আহত হয়েছিলেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় কটকের রুদ্র হাসপাতালে। এগরার ঘটনার পর বিস্তর হইচই হয়, নড়েচড়ে বসে রাজ্য প্রশাসনও। 
কিন্তু সাড়ে তিন মাসের মাথায় দত্তপুকুরের এই বিস্ফোরণ নতুন করে একাধিক প্রশ্ন তুলে দিল, মনে করছেন অনেকেই।


 


আরও পড়ুন:এবার গাজিয়াবাদ, রাজমিস্ত্রীর কাজে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু মুর্শিদাবাদের ৩ পরিযায়ী শ্রমিকের !