সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: পরীক্ষা শেষ হওয়ার আধঘণ্টা আগে সঠিক পরীক্ষাকেন্দ্রে (exam center) পৌঁছলেন পরীক্ষার্থীরা (examinees)। অভিযোগ, অ্যাডমিট কার্ডে (admit card) ঠিকানা (wrong address) ভুল থাকাতেই এমন গণ্ডগোল (mistake)। এক জন নয়, দশ জন টেট পরীক্ষার্থীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। এই 'ভুলের' জেরেই উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদ থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলায় চলে যান পরীক্ষার্থীরা। তাঁদেরই এক জনের দাবি, সেখানে পৌঁছে জানতে পারেন পরীক্ষার আসল কেন্দ্র খড়়দার কল্যাণনগর বিদ্যাপীঠ। সেখান থেকে যখন তাঁরা সঠিক পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছন, তখন পরীক্ষা শেষ হতে আধঘণ্টা বাকি। 


কী প্রতিক্রিয়া পরীক্ষার্থীদের?
ওই দশ পরীক্ষার্থীরই এক জন জানালেন, তাঁর অ্যাডমিট কার্ডে আমতলা সেন্টারের কথা লেখা রয়েছে। তাঁর কথায়, 'আমার বাড়ি খড়দায়। তাও আমার অ্যাডমিট কার্ডে আমতলা সেন্টারের কথা লেখা রয়েছে। এবং খড়দায় আমার ঘরের পাশে স্কুল হয়েও আজ টেট পরীক্ষা দিতে পারলাম না।' তাঁদের বক্তব্য, মেরেকেটে পঁয়তাল্লিশ মিনিট মতো পরীক্ষা দিতে পেরেছেন। পৌনে দুটোর সময় তাঁরা সঠিক পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছেছেন, আড়াইটেয় তাঁদের উত্তরপত্র নিয়ে নেওয়া হয়েছে। গড়ে ২৫-৩০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছেন, জানালেন তাঁরা। তবে পরীক্ষার্থীদের বয়ান থেকে তাঁদের ভোগান্তির ছবিটা স্পষ্ট। জানালেন, সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে অ্যাডমিট কার্ডে লেখা ঠিকানায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু যখন আসল পরীক্ষাকেন্দ্রের কথা জানতে পারেন, তখনই স্থানীয় বিষ্ণুপুর থানায় যোগাযোগ করা হয়। থানা থেকেই তাঁদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। যদিও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে খবর, খড়়দার কল্যাণনগর বিদ্যাপীঠের ঠিকানা সম্পর্কে কয়েকদিন আগেই স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, পোর্টালেও তা আপডেট করে দেওয়া হয়। তা হলে কেন জানতে পারলেন না পরীক্ষার্থীরা? প্রশ্ন, বিতর্ক সত্ত্বেও ভোগান্তি ও হতাশার ছবিটা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। 


দাবি শিক্ষামন্ত্রীর...
২০১৭ থেকে '২২, দীর্ঘ পাঁচ বছর পর রাজ্যে প্রাথমিক টেট পরীক্ষা হল। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় এ দিন পরীক্ষাগ্রহণ হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রের ফটকে মেটাল ডিটেক্টর থেকে কন্ট্রোল রুমে বসে নজরদারি, কোনও কিছুই বাদ দেয়নি পর্ষদ। পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থীরাদেরও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি সে ভাবে। সেই আবহেই মুখ খুললেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এ দিন এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হয়ে প্রশ্নের জবাবে ব্রাত্য বলেন, "আমি বলব,যা হয়েছে, তাকে ছাপিয়ে, অতীতকে মনে রেখে, সংস্কার ঘটিয়ে, যে ভাবে পরীক্ষা নিল পর্ষদ, তার জন্য অভিজ্ঞতা এবং কৃতজ্ঞতা জানাব। মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোগিতা এবং নির্দেশ না থাকলে এ ভাবে পরীক্ষা নেওয়া যেত না। এ ভাবে পরীক্ষা দিতে পারতেন না সাত লক্ষ পরীক্ষার্থী।" নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে বার বার কার্যত অপদস্থই হতে হয়েছে তৃণমূলকে। প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে খোদ মমতাকে। সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে, মানুষের আস্থা অর্জনেই কি নিরাপত্তায় এত জোর! প্রশ্নের উত্তরে ব্রাত্য বলেন, "আমি তো মনে করি, আস্থা রয়েছে। মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আস্থা রেখেছেন। কোথাও ভুল, অন্যায় যদি হয়ে থাকে, আমরা তার প্রতিকারের চেষ্টা করছি। কেউ কেউ হয়ত অতীত দেখবেন। আমি বলব, ভবিষ্যৎ দেখতে। অত্যন্ত দায়িত্ব-সহকারে পরীক্ষা নিয়েছে পর্ষদ। আমি বলব, সামনের দিকে তাকান।"


আরও পড়ুন:পাঁচ বছর পর আজ রাজ্যে প্রাথমিক টেট, অগ্নিপরীক্ষা রাজ্য এবং পর্ষদেরও, ছয় জেলায় ইন্টারনেটে নিয়ন্ত্রণ