সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: প্রতিদিন খাতা-বই নিয়ে স্কুলে পড়তে আসে শিশুরা। সরকারি স্কুলে ক্লাস হয়। যে ভবনে ক্লাস চলে তার ঠিক সামনেই এখন বালির পাহাড়। আর সেখানে উড়ছে তৃণমূলের পতাকা, তৈরি হচ্ছে দলীয় অফিস। এমনই ছবি উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Parganas) কদম্বগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষীপুল গ্রামে। স্কুলের প্রায় গায়ের উপর রাজনৈতিক দলের অফিস? কীভাবে? স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, যে জমিতে তৃণমূলের পার্টি অফিস তৈরির কাজ হচ্ছে সেটা আদতে সরকারি স্কুলের জমি। গোটা ঘটনায় তৃণমূলেরই এক পঞ্চায়েত সদস্যের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। জেলা পরিষদের দাবি, গায়ের জোরে এই কাজ করেছেন ওই পঞ্চায়েত সদস্য।
সরকারি স্কুলের জমি দখল করে তৃণমূলের (TMC Party Office) পার্টি অফিস তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে দলেরই পঞ্চায়েতের সদস্যের বিরুদ্ধে। উত্তর ২৪ পরগনার কদম্বগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষীপুল গ্রামের এই ঘটনায় বেজায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। এক অভিভাবিকা অপর্ণা ঘোষের অভিযোগ, 'এখানে আমাদের বাচ্চারা পড়াশোনা করে, এটা একটা সরকারি জমি। এর ওপরে যদি কোনও তৃণমূলের পার্টি অফিস হয়। তাহলে আমাদের বাচ্চারা ভবিষ্যতে শিখবে টা কী? এখানে পার্টি অফিসটা হওয়া উচিত নয়। আমরা সমর্থন করিনা। এটা অন্যায়।'
কিন্তু স্কুলের সামনে তৃণমূলের অফিস তৈরি হলেও কেন বারণ করলেন না স্কুলের শিক্ষক? লক্ষ্মীপুল শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের টিচার ইনচার্জ আমিনা খাতুন বলেন, 'ওঁদের গ্রাম। সরকার, সবাই তো আমরা সরকারের হিসেবের মধ্যে। তো... গ্রাম হোক, স্কুল হোক, গ্রামবাসী হোক, আমি হোক, আপনি হোক- সবই তো আমরা সরকারের হিসেবের মধ্যে। ওঁদের গ্রাম, ওরা কিছু একটা ভেবে করছে। এ ব্যাপারে আমি প্রতিবাদ করিনি। তবে আমাকে বিডিও অফিস থেকে বলেছে ছবি তুলে পাঠাতে, আমি ছবিটা পাঠিয়েছি।'
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য শাহাবুদ্দিন সর্দার। তাঁর দাবি, স্কুলের জমিতে নয়, জেলা পরিষদের জমিতে পার্টি অফিস তৈরি করা হচ্ছে। কদম্বগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য শাহাবুদ্দিন সর্দার বলেন, 'না, এটা অ্যাকচুয়ালি যারা বলেছে, সেটা হচ্ছে ভুল ব্যাখ্যা। জেলা পরিষদের ৩.৫ শতক জমি স্কুল নেবে এবং স্কুল যেটা দখল করেছে সেটা ৫-এর ওপরে জমি। রাত্রে আমরা বসার জন্য করছি। স্কুলের ক্ষতির কোনও ব্যাপার নেই।'
দলীয় অফিস তৈরির বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ। তাঁর হুঁশিয়ারি, গায়ের জোরে এই কাজ করছেন পঞ্চায়েত সদস্য, এর ব্যবস্থা নেবে জেলা পরিষদ। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ আসাদ উদ জামান বলেন, 'ওখানকার যিনি দায়িত্বে আছে, শাহাবুদ্দিন, তিনি এটা করছেন। স্থানীয় পুলিশ গিয়ে বেশ কয়েকবার মানা করে এসেছে। তা সত্ত্বেও তিনি গায়ের জোরে এটা করছেন। যেহেতু জমিটার মালিক জেলা পরিষদ, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ, আমরা, নিশ্চয়ই তো একটা স্টেপ নেওয়া হচ্ছে।'
আরও পড়ুন: থানা অভিযানে ধুন্ধুমার, ধস্তাধস্তি-খণ্ডযুদ্ধ, গার্ডরেল নালায় ফেলল বিজেপি