সত্যজিত্ বৈদ্য, ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, শিবাশিস মৌলিক, বাগুইআটি: চলন্ত গাড়িতে শ্বাসরোধ করেই খুন করা হয় দু'জনকে। প্রথমে একটি মৃতদেহ ফেলা হয় বাসন্তী হাইওয়ের ধারে নয়ানজুলিতে। আরও কিছুটা এগিয়ে দ্বিতীয় মৃতদেহ ফেলা হয় হাড়োয়া এলাকায়। বাগুইআটিতে (Baguiati News) দুই পড়ুয়াকে অপহরণ করে খুনের ঘটনায় এমনই তথ্য সামনে আনল পুলিশ। বাইক কেনার টাকা লেনদেন ঘিরে ঘটনার সূত্রপাত বলে জানা গিয়েছে।
বাগুইআটিতে দুই পড়ুয়াকে কী ভাবে খুন!
পুলিশ জানিয়েছে, এই জোড়া অপহরণ এবং খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মৃত এক ছাত্রেরই প্রতিবেশী, সত্যেন্দ্র চৌধুরী, যার সঙ্গে নিহত ছাত্রের পারিবারিক সম্পর্ক খুব ভাল ছিল (North 24 Parganas)। পুলিশ জানিয়েছে, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এই ঘটনায় অভিজিত্ বসু নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে জেরা করেই সামনে আসে গোটা ঘটনা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি মোটরবাইক কেনার জন্য মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরীকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অতনু। সেই টাকায় বাইক না কিনে, অতনুর কাছে আরও টাকা দাবি করে সত্যেন্দ্র। কিন্তু অতিরিক্ত সেই টাকা আর দিতে পারেনি অতনু। গন্ডগোলের সূত্রপাত সেখান থেকেই (Baguiati Twin Murder)।
বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, "২২ তরিখ সত্যেন্দ্র অতনুকে ডাকে, বলে বাইক কিনতে যাব। অতনু এসে অভিষেককেও ডেকে নেয়। দু’জনকে গাড়িতে তুলে নেয় সত্যেন্দ্র। সেই গাড়িতে ৩-৪ জন আগে থেকেই ছিল।"
পুলিশের দাবি, আগে থেকে ঠিক করা ছিল ভাড়াটে খুনি। সেই মতো বাগুইআটি থেকে একটি সেল্ফ ড্রাইভিং গাড়িতে অতনু ও অভিষেককে তোলে সত্যেন্দ্র। বলে, মোটরবাইক কিনতে যাবে। প্রথমে যায় রাজারহাটের দিকে। সেখানে তাদের খাবার খাওয়ানো হয়। খাওয়ানো হয় চা-ও। সেখানে অতনু-অভিষেককে নিয়ে নানা জায়গায় ঘুরতে থাকে গাড়ি। সেখানকার একটি বাইকের শো রুমেও যায় তারা। গোয়েন্দা প্রধান জানিয়েছেন, বাইকের শো রুমে যায়। ১০-১৫ মিনিট ছিল। কথা বলে বেরিয়ে আসে। বাসন্তী হাইওয়েতে নিয়ে যায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, ভাড়াটে খুনিদের বলা হয়েছিল, একটা কাজ করতে হবে। তার জন্য দেওয়া হবে টাকা। ২২ অগাস্টই রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে গাড়িতে খুন করা হয় দুই কিশোরকে। গাড়িতে দুই কিশোর-সহ ছিল ছয় জন। তবে ঘটনার পর থেকে দুই ছাত্রেরই মোবাইল ফোন উধাও।
পুলিশ জানিয়েছ, রাজারহাট এলাকা থেকে গাড়ি চলে যায় বাসন্তী হাইওয়ের দিকে। গাড়িতে আগেই দড়ি মজুত করে রাখা ছিল। সুযোগ বুঝে বাসন্তী হাইওয়েতে চলন্ত গাড়িতে অতনু ও অভিষেককে গলায় ফাঁস লাগিয়ে খুন করা হয়। এরপর শিরীষতলার কাছে দু'টি ভিন্ন জায়গায় খালে ফেলে দেওয়া হয় দু'টি মৃতেদহ।
গোয়েন্দা প্রধান বলেন, "ওরা গাড়িতে দড়ি আগে থেকে জোগাড় করে রেখেছিল। বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে থাকে। বাসন্তী হাইওয়েতে নিয়ে যায়। গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করে। তারপর আরও এক-দেড় ঘণ্টা ঘোরাঘুরি করে দেহ ফেলে দেয় আলাদা আলাদা জায়গায়।'
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
ব্যক্তিগত গন্ডগোলের জেরে খুন হলেও, গোটা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। দুই পরিবারের অভিযোগ, বার বার অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও গুরুত্ব দেয়নি পুলিশ। মর্গে দীর্ঘদিন দেহ পড়ে থাকলেও, পুলিশ খবরই রাখেনি বলেও অভিযোগ উঠছে।