সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: দিনে-দুপুরে চুরি হচ্ছে বিদ্যাধরী নদীর মাটি। কুলটিতে পুলিশ ও প্রশাসনের চোখের সামনেই নদীর গা ঘেঁষে তৈরি হয়েছে মস্ত বড় পলিমাটির খাদান। বড় বড় জেসিবি এসে পৌঁছচ্ছে সেখানে। প্রকাশ্যে দিবালোকে তাতে করে তোলা হচ্ছে মাটি। আর সেই মাটি লরি বোঝাই করে পৌঁছে যাচ্ছে ইঁটভাটায়। সব দেখেও হেলদোল নেই কারও (River Soil Theft)। 


বিজেপি-র অভিযোগ তৃণমূলই রয়েছে এই মাটিচুরির নেপথ্যে


উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Parganas News) হাড়োয়া থানাক অন্তর্গত কুলটি গ্রামের ঘটনা। সেখানে তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এ ভাবেই চুরি হচ্ছে নদীগর্ভের মাটি। বিজেপি-র অভিযোগ তৃণমূলই রয়েছে এই মাটিচুরির নেপথ্যে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মাটি বিক্রির টাকায় বোমা-বন্দুক কিনে তৃণমূল মজুত করছে বলে দাবি গেরুয়া শিবিরের। সেই নিয়ে চরমে উঠেছে রাজনৈতিক তরজা।


স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রকাশ্য দিবালোকে বিদ্যাধরীর নদীর গর্ভ থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে মাটি। ভয়ডরের কোনও বালাই নেই। বরং নদীর গা ঘেঁষেই তৈরি করা হয়েছে পলিমাটির মস্ত বড় খাদান। জোয়ারের সময় বাঁধের গায়ে ডক কেটে সেখানে পলিমাটি ঢোকানো হয়। তার পর জেসিবি নামিয়ে দিনে-দুপুরে তোলা হয় মাটি। লরি ভর্তি করে তা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইঁটভাটায়। 


মাটি কাটার কাজ করছেন যাঁরা, তাঁরা জানিয়েছেন, পেটের জ্বালায় এই কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের। এলাকার জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশেই এই মাটি চুরি চলছে। জেসিবি-র চালক বাবুসোনা মণ্ডল বলেন, "খাদানের মালিকের নাম জানি না। আমাকে মাটি তোলার জন্য ডাকা হয়েছে।" বিদ্যাধরী নদীর মাটিই যে লরিতে বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইঁটভাটায়, তা স্পষ্ট জানিয়ে দেন তিনি। 


আরও পড়ুন: Anubrata Mondal : 'দিল্লির লস্যি খাবেন, সুখেই থাকবেন' অনুব্রতর দিল্লি যাত্রা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ দিলীপের


এই ঘটনায় রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। বসিরহাটে বিজেপি-র সংগঠনিক জেলা অধ্যক্ষ শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, "হাড়োয়া থানার অন্তর্গত কুলটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিদ্যাধরী নদী থেকে দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে নদীর পলিমাটি চুরি হচ্ছে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের মদতে। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করার জন্য বোমা, গুলি, আগ্নেয়াস্ত্র মজুত করছে তৃণমূল। আর সেই টাকা এই মাটি চুরি করে জোগান দিচ্ছে।  পঞ্চায়েত নির্বাচনে সন্ত্রাস করে ক্ষমতা দখল করবে। তাই মাটি চুরি চলছে। এই মাটি চুরি বন্ধ না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে হুঁশিয়ারি দেন।"


যদিও বিজেপি-র অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন কুলটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মঙ্গলি সারদা। তিনি জানান, তাঁর কাছে এমন কোনও অভিযোগ নেই। এ ভাবে মাটি কাটা অবৈধ। অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখা হবে। বিজেপি মিথ্যা দোষ দিচ্ছ তৃণমূলকে।


মাটি চুরি নিয়ে কোনও অভিযোগ আসেনি, দাবি তৃণমূলের


এলাকার পঞ্চায়েত প্রধানের ছেলে তথা উত্তর ২৪ পরগানা জেলা যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অতনু সরদা বলেন, "নদী থেকে এ ভাবে মাটি চুরি করা বেআইনি। পঞ্চায়েত থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে যেভাবে দিনের আলোয় মাটি চুরি হচ্ছে, সে বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি।" কুলটি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে দু'টি ইঁটভাটা রয়েছে। একটি বন্ধ, আর একটি চালু। লিখিত অভিযোগ এলে বিষয়টি দেখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।


এ দিকে হাড়োয়ার বিএল অ্যান্ড আর ও আশিস সেন জানান, তাঁর কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। তবে বিদ্যাধরী নদী থেকে পলিমাটি চুরি করা সম্পূর্ণ বেআইনি। এখানে কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। দ্রুতই ব্যবস্থা নেবেন বলে অশ্বাস দেন।