সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: সরকারি হাসপাতাল। ভর্তি রয়েছেন রোগীরা। তখনই আঁধারে ডুবল হাসপাতাল। সামান্য কিছুক্ষণের জন্য নয়। টানা তিন ঘণ্টার জন্য। ততক্ষণ গরমে নাজেহাল হতে হল রোগীদের। অথচ হাসপাতালে জেনারেটর ছিল। তবুও কেন এমন ঘটনা? কারণ শুনে চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, জেনারেটরের তেল ফুরিয়ে যাওয়ায় জেনারেটর চালানো যায়নি। ছবিটা উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুর হাসপাতালের। গোটা ঘটনা তীব্র ক্ষোভ রোগীর পরিজন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। 


একদিকে গরমে আরও অসুস্থ বোধ করছেন রোগী। পাখা ঘুরছে না, আলো জ্বলছে না। লোডশেডিংয়ের কারণে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে টিমটিম করে জ্বলছে মোমবাতি। এমনই ছবি দেখা গিয়েছে ওই হাসপাতালে। ওই হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী মহম্মদ শরিফুল মোল্লা বলছেন, 'অন্ধকারের মধ্যে পড়ে আছি, কেউ আসেও না, দেখেও না। বাড়ি চলে যেতে চাইলাম, ছুটি দিল না।' মঙ্গলবার সন্ধে সাড়ে ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন ছিল গোটা হাসপাতাল। অভিযোগ, হাসপাতালে জেনারেটর থাকা সত্ত্বেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা এভাবেই লাইট-ফ্যান বন্ধ অবস্থায় ছটফট করতে হয় রোগীদের। সরকারি হাসপাতালে জেনারেটর থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে কেন এভাবে কার্যত অচলাবস্থা তৈরি হল? জেনারেটরের তেল ফুরিয়ে যাওয়াতে এই বিপত্তি বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। বিশ্বনাথপুর হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার শ্য়ামল কুণ্ডু বলেন, 'জেনারেটরে তেল শেষ হয়ে গিয়েছে বলে চলছে না।' আর এক রোগী ওয়াজেদ আলি বলেন, 'ঘণ্টাতিনেক ধরে অন্ধকারে পড়ে আছি। জেনারেটর আছে, তাতে নাকি তেল নেই। প্রায়ই এরকম হয়।'


রাজনৈতিক তরজা:
হাসপাতাল আপৎকালীন পরিষেবার জায়গা। সেখানে জেনারেটরের তেল ফুরিয়ে গেলেও কেউ খেয়াল করলেন না কেন? উঠছে এমন প্রশ্ন, চড়ছে রাজনীতির পারদও। বিজেপি নেতা দেবাশিস মজুমদার বলেন, 'অন্ধকার, ফ্যান চলছে না। পেশেন্টরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে, তাঁরা বলছেন বাড়ি চলে যাব। ৬০ লক্ষ টাকার জেনারেটর বাইরে পড়ে রয়েছে, অথচ বলছে তেল নেই। কোটি কোটি টাকার বিল্ডিং হচ্ছে, কিন্তু চিকিৎসা পরিষেবা মিলছে না।' যদিও বিরোধীদেরই পাল্টা নিশানা করে দেগঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি এবং তৃণমূল নেতা তুষারকান্তি দাস বলেন, 'বিরোধীরা ছোটখাটো ইস্যু নিয়ে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে। বিশ্বনাথপুর হাসপাতালের ঘটনা অবশ্যই কাঙ্খিত নয়। পরে আমরা জেনারেটরে তেলের ব্যবস্থা করা হয়। পরে যাতে এমন আর না ঘটে ব্যবস্থা করা হবে।'


সম্প্রতি SSKM-এ রোগী ভর্তি করাতে না পেরে সরব হয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। পরপরই রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। এবার উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার গ্রামীণ হাসপাতালের এই দুরবস্থার ছবি সামনে এল। বারবার কেন সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার এমন ছবি সামনে আসছে? উঠছে প্রশ্ন।


আরও পড়ুন: জিমেলে স্টোরেজে সমস্যা? মেল ঢুকছে না? চটজলদি কী করবেন?