দত্তপুকুর: ফের বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ। আর এবার উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে (Duttapukur)। স্থানীয়দের দাবি, এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৮ জনের। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গোটা এলাকা। আর এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে, বাজি ক্লাস্টারের ভাবনা কি খাতায় কলমে? প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের সদিচ্ছা নিয়েও।
বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে উঠছে প্রশ্ন: প্রথমে এগরা, তারপর বজবজ, দুবরাজপুর, ইরেজবাজার, চলতি বছর ধারাবাহিক বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা। মাত্র সাড়ে ৩ মাস এগরা ভয়াবহ বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ১২ জনের। সেই ঘটনার পর প্রশাসনের তরফে ঘোষণা করা হয়, বেআইনি বাজি কারখানা রুখতে ক্লাস্টার তৈরি করা হবে। বিস্ফোরণকাণ্ডের ১১ দিন পর এগরায় যান মুখ্যমন্ত্রী। স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ক্লাস্টার তৈরির ঘোষণা করেছিলেন। জানিয়েছিলেন জনবসতি থেকে দূরে তৈরি হবে গ্রিন ক্র্যাকার ক্লাস্টার। তিনি বলেছিলেন, ' গ্রিন ক্র্যাকার, যা মানুষের কাজে লাগে, অথচ জীবনে ক্ষতিকারক নয়, সেই রকম ধরনের আমরা ক্লাস্টার, যেখানে যেখানে বাজি কারখানা আছে, সেখান থেকে জনগণ সম্বলিত এলাকা, তার থেকে একটু দূরে আমরা করে দেব। '
কিন্তু কোথায় কী? মে মাসের পর অগাস্ট মাসে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে উঠছে প্রশ্ন। সাড়ে ৩ মাসে যে পরিস্থিতির হেরফের ঘটেনি, দত্তপুকুরের ঘটনা তা প্রমাণ করে দিল। দত্তপুকুরে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে ৩ শিশু, মহিলা-সহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এদিন সকাল ১০টা নাগাদ দত্তপুকুরের মোচপোল এলাকায় সামসুল আলি ওরফে খুদের বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়। ঘটনার কয়েকঘণ্টা পরেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছিল ছিন্নভিন্ন দেহ। বিস্ফোরণের ধূলিসাৎ দোতলা বাড়ি। আশেপাশের একাধিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কয়েকটি বাড়ির চাল উড়ে যায়। ভেঙে পড়েছে দেওয়াল। এলাকার আরও একটি বাড়িতে বেআইনি বাজি মজুত রয়েছে বলে দাবি করে ভাঙচুর চালান স্থানীয়রা। এদিন বিস্ফোরণের শব্দে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে বারাসাত শহরও কেঁপে ওঠে।
দত্তপুকুরে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় তৃণমূল-যোগ রয়েছে বলে করেছেন স্থানীয়রা। তাঁদের দাবি, বাড়ির মালিক সামসুল আলি ওরফে খুদে তৃণমূল কর্মী। তাই প্রশাসনের মদতেই তাঁর বাড়িতে বেআইনি বাজি কারখানা চলত এবং বাজির আড়ালে বোমাও তৈরি হত বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের অভিযোগ, খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ সব জানতেন। বছর ৪-৫ আগে পুলিশকে অভিযোগ জানিয়েও কাজ হয়নি। নীলগঞ্জ ফাঁড়ি কার্যত এটিএমে পরিণত হয়েছে। পুলিশই টাকা খেয়ে বেআইনি ব্যবসায় সাহায্য করে যাচ্ছে। সব দেখেও হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন পুলিশ কর্তারা। প্রশাসনের মদত, প্রভাবশালী যোগ ও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার কারণেই জনবহুল এলাকায় বিস্ফোরক মজুত করা হয়েছিল বলে অভিযোগ।